ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দার্জিলিংয়ে শান্তি ফেরার ইঙ্গিত, মমতাকে চিঠি গুরুংয়ের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৭
দার্জিলিংয়ে শান্তি ফেরার ইঙ্গিত, মমতাকে চিঠি গুরুংয়ের দার্জিলিংয়ের একটি পর্যটন স্পট

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় হরতাল পালনের পর অবশেষে হার মানলো গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)। আন্দোলনকারী মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং সেখানে শান্তি ফেরাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। এই চিঠিকে পর্যটনের জন্য বিখ্যাত দার্জিলিংয়ে শান্তি ফেরার ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানোর খবরটি বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম। তারা বলছে, চিঠিতে কয়েকটি দাবি উপস্থাপন করা হলেও জিজেএম প্রধান শান্তি ফেরাতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মমতার প্রতি।

বিমল গুরুং বলেন, আন্দোলনের অঞ্চল দার্জিলিং, কালিম্পং, শিলিগুড়ি তেরাই ও দোয়ার্সের জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে এই এলাকায় স্বাভাবিকতা ফেরাতে স্থায়ী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই মুখ্যমন্ত্রীকে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, লাগাতার বিক্ষোভ করলেও জিজেএম’র নেতৃত্বাধীন জোটে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় এবং গুরুংসহ মোর্চার নেতাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যক্রম প্রতিরোধ বিষয়ক সেলে রাজ্য সরকার অভিযোগ দেওয়ায় হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে আন্দোলনকারীরা। আর তার প্রকাশ ঘটলো গুরুংয়ের চিঠিতে।

‘গোর্খাল্যান্ড’ নামে আলাদা রাজ্যের দাবিতে বামফ্রন্টের আমলে বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দার্জিলিং। মমতা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামে জিজেএম।

যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে আলাদা রাজ্যের দাবি কোনোভাবেই মানা হবে না বলে বারবার জানানো হয়েছে। তবু এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় জিজেএম। গত জুন মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দার্জিলিং সফরকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জিজেএম সমর্থকরা।  দার্জিলিংয়ে আন্দোলন (ফাইল ফটো)এই প্রেক্ষিতে ১০ জুন হরতালের ডাক দেয় জিজেএম। তারপর থেকেই কার্যত অচল হয়ে পড়ে বাংলাদেশিসহ সারাবিশ্বের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় জেলাটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৬ জুন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তার আগে সরিয়ে নেওয়া হয় বাংলাদেশিসহ সব পর্যটকদের। যারা আটকা পড়েন তাদেরও সরে যেতে বলা হয়।

এরপর রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার নিরাপত্তার মুখে দার্জিলিংয়ের পর্যটন ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। ৭ ও ৮ জুলাই নতুন করে সহিংসতা ছড়ালে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। তারপর ১৯ ও ২৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিস্ফোরণ ঘটলে আন্দোলনকারী মোর্চার নেতাদের মধ্যে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। এরপর তাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যক্রম প্রতিরোধ বিষয়ক সেলে অভিযোগ করে রাজ্য সরকার।

এমন সব হিসাব-নিকেশে শেষ পর্যন্ত হার মেনে যাওয়া গুরুং তার চিঠিতে মমতার কাছে দাবি জানিয়ে বলেছেন, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নতুন-পুরনো সব মামলা তুলে নিতে হবে, পাহাড়ে পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও মৃত্যুর কারণ খুঁজতে সিবিআই তদন্ত করতে হবে, খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে এবং আন্দোলনকালে আটক কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে ইন্টারনেট, ক্যাবল টিভি ও লোকাল টিভি চ্যানেলের পরিসেবাও।  

পাশাপাশি তিনি বলেছেন, দার্জিলিং গোর্খা পাহাড়ি পরিষদ (ডিজিএইচসি) বা গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (জিটিএ) নামে বিশেষ স্বশাসিত পরিষদ গঠন করে পাহাড়িদের মানুষের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে হবে।  

এখন এই চিঠির জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা কী প্রতিক্রিয়া দেন, সেদিকেই তাকিয়ে পর্যটন-নির্ভর পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ের মানুষেরা। তবে দার্জিলিং ইস্যুতে মমতার ডাকা ২৯ আগস্টের সর্বদলীয় সভার আগে এই চিঠিকে ‘সাধুবাদ’ জানাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।