ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

স্পেন থেকে ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ কাতালোনিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
স্পেন থেকে ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার পর বার্সেলোনার রাস্তায় কাতালানদের উল্লাস

স্পেন থেকে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা চেয়ে উত্থাপিত প্রস্তাব স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির পার্লামেন্টে পাস হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সরাসরি শাসনের’ হুঁশিয়ারির জবাবে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’র প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে উত্থাপিত হলে বিপুল ভোটে পাস হয়ে যায়। অবশ্য ঘণ্টাখানেক পরই মাদ্রিদ সরকার কেন্দ্রীয় সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটে কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন স্থগিত করে সরাসরি শাসনের প্রস্তাব পাস করা হয়েছে।

স্থানীয় সময় দুপুরে ১৩৫ আসনের কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে ৭০ সদস্যের ভোটে পাস হয়ে যায়। প্রস্তাবের বিপক্ষে যায় ১০ ভোট।

আর খালি ব্যালট জমা দেন ২ সদস্য। তবে এই ভোট বর্জন করেন মাদ্রিদের অনুগত রাজনীতিকরা। মূলত ঘণ্টাকয়েক আগে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে মাদ্রিদের সরাসরি শাসনের অধীনে নিয়ে আসার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর স্বাধীনতার এই প্রস্তাব পাস করা হয় কাতালান পার্লামেন্টে।

বার্সেলোনাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রধানমন্ত্রী রাজয়ের সিনেটে বক্তৃতার পরই পার্লামেন্টে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তাব উত্থাপন করেন ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব। ‘মাদ্রিদ আলোচনার টেবিলে এগিয়ে না আসায়’ উত্থাপিত এই প্রস্তাবের শুরুতে বলা হয়- ‘আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী স্বাধীন কাতালোনিয়ার ঘোষণা দিচ্ছি’। এই প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর বেশিরভাগ সদস্যই একযোগে ‘হ্যাঁ’ বলেন। প্রস্তাবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক ও সমাজবাদী রাষ্ট্র কাতালোনিয়ার জন্য সংবিধান প্রণয়নের আহ্বান’ও রাখা হয়। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় ও কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমন্তপ্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর কাতালান সরকারের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে দেওয়া বার্তায় বলা হয়, কাতালোনিয়ার পার্লামেন্ট আইনের শাসনের অধীনে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক ও সামাজিক রাষ্ট্র হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী কাতালান গঠন করেছে।

গত ১ অক্টোবর গণভোটের পর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং গণভোট ইস্যুতে পরস্পরের স্বাধীনতা ঘোষণা ও স্বায়ত্তশাসন বাতিলের হুমকির ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সিনেটে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি আবেগপূর্ণ ভাষণে সিনেটরদের উদ্দেশে বলেন, যখন কোনো পথই খোলা থাকে না, তখন সংবিধান সুরক্ষায় কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসনই বাতিল করতে হবে। এই পথ সুগম করতে কাতালান প্রেসিডেন্টসহ (কার্লেস পুজদেমন্ত) ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেতাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে। সুতরাং সিনেটকে সেরকম পদক্ষেপই অনুমোদন দিতে হবে। কাতালান স্বায়ত্তশাসন বাতিলে সংবিধানের ১৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নই একমাত্র উপায়।

ঘণ্টাকয়েক পর কাতালোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী রাজয় স্পেনবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। ‘একইসঙ্গে কাতালোনিয়ায় আইনের শাসন বজায় থাকবে এবং সংবিধান পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে’ বলে ঘোষণা দেন। এর ঘণ্টাখানেকের কম সময় পর সিনেটে পাস হয়ে যায় ১৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদ। এই অনুচ্ছেদ আইন আকারে পাসের বিধানে কাতালোনিয়ায় মাদ্রিদের শাসন জারির পাশাপাশি সেখানকার ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাচ্যুত করার কথা বলা হয়।  

কিন্তু কাতালোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলার প্রেক্ষাপটে এখন মাদ্রিদ সেখানে কীভাবে তাদের আইন বাস্তবায়ন করবে, এর উত্তর খুঁজছে সংবাদমাধ্যম।

স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে। স্পেন থেকে স্বাধীনতাকামী কাতালোনিয়ার ম্যাপনিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাকামী দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।

তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত গণভোটের পর দফায় দফায় বাকযুদ্ধ হয় রাজয় ও পুজদেমন্তের মধ্যে। পুজদেমন্ত এক পর্যায়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেও তা আলোচনার স্বার্থে স্থগিত করলেও রাজয় স্পেনের ঐক্য ও সংবিধান সুমন্নত রাখার স্বার্থে কাতালোনিয়াকে একীভূত রাখতে স্বায়ত্তশাসন বাতিলের কথাই বলেন। দু’পক্ষের অনড় অবস্থান শেষ পর্যন্ত শুক্রবারের এই উত্তেজনায় গড়িয়েছে।

এদিকে, স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে কাতালান নেতাদের স্বাগত জানাতে রাস্তায় নেমেছে লাখো মানুষ। বার্সেলোনার রাস্তা এখন স্বাধীনতাকামীদের পদভারে মুখরিত। বেশিরভাগ লোকজন অবস্থান নিয়েছে আঞ্চলিক পার্লামেন্টের প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭/২১৫৯ ঘণ্টা
এইচএ/

** কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা: মুখোমুখি মাদ্রিদ-বার্সেলোনা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।