ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আসামে ‘বাংলাদেশি’ অনুপ্রবেশের নেপথ্যে চীন-পাকিস্তান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮
আসামে ‘বাংলাদেশি’ অনুপ্রবেশের নেপথ্যে চীন-পাকিস্তান ভারতীয় সেনা প্রধান বিপিন রাওয়াত। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে ‘বাংলাদেশি’দের অনুপ্রবেশ ঘটনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। 

তিনি দাবি করেছেন, চীনের সহায়তায় ভারতের সঙ্গে ‘ছায়া যুদ্ধ বা প্রক্সি ওয়ার’র অংশ হিসেবে এ অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে পাকিস্তান।  
 
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দিল্লিতে ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এবং সীমান্ত সুরক্ষা’ বিষয়ক এক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন এসব কথা বলেন।

 

আসামের বিভিন্ন জেলায় মুসলিম জনগোষ্ঠী বাড়ছে-সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে আসামে বদরুদ্দিন ওমরের অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফোরামের (এআইইউডিএফ) প্রভাব বাড়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।  

পাকিস্তানের প্রতি ইঙ্গিত করে জেনারেল বিপিন বলেন, আমাদের পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটি পরিকল্পিতভাবে এ অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। তারা সবসময়ই একটি ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে এই এলাকার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।

‘অঞ্চলটিকে অস্থির করে তুলতে এতে সমর্থন দিচ্ছে আমাদের উত্তরের সীমান্তের দেশটি (চীন)। সামনে আমরা আরও অনুপ্রবেশ দেখতে পাবো। ’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের (চীন) সমর্থন নিয়ে পশ্চিমা প্রতিবেশী এই ছায়াযুদ্ধের খেলাটা ভালোই খেলে। এ এলাকাকে অস্থির রাখতে চায় তারা। এভাবে অনুপ্রবেশ ঘটতেই থাকবে। এর সমাধান হল-সমস্যা শনাক্ত করা ও সামগ্রিকভাবে তা পর্যবেক্ষণ করা। ’ 

সেনাপ্রধান এও বলেন, বাংলাদেশে বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে জমি কমছে ও সংকুচিত হচ্ছে এবং সেটাও অনুপ্রবেশের আরেকটি কারণ।

তার বক্তব্যে স্থান পায়, ১৯৮৪ সালে আসামে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মাত্র দু’টি আসন পাওয়ার কথাও।  

তিনি বলেন, আসামে এআইইউডিএফ বলে একটা দল আছে। খেয়াল করে দেখুন, বিজেপি বছরের পর বছর যে গতিতে বেড়েছে, ওরা (এআইইউডিএফ) আসামে তার চেয়েও দ্রুতগতিতে বেড়েছে।

মুসলিম স্বার্থরক্ষার দাবিতে ২০০৫ সালে আসামে গঠিত হয় এআইইউডিএফ। দলটি থেকে বর্তমানে তিনজন লোকসভা সদস্য ও ১৩ জন বিধায়ক রয়েছেন।  

ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেন, ‘ওখানকার জনবিন্যাস এখন আর বদল করা সম্ভব বলে মনে করছি না। পাঁচ থেকে বেড়ে আট বা ৯টি জেলায় এমন হলে সরকারে যে-ই থাকুক, বিপর্যয় কিন্তু ঘটেছে। ’

বেশ কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগ নিয়ে উত্তপ্ত আসামের রাজনৈতিক অঙ্গন। কথিত অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে সেখানে নাগরিক পুঞ্জিও করছে সরকার।  

গতবছর আসামে সরকার গঠনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি দাবি করেন, অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে।  

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি একটি আদমশুমারি চালানো হয় রাজ্যটিতে। আদমশুমারিতে যুক্ত হওয়ার জন্য ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষের আবেদন জমা পড়ে।  

গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) খসড়া, যাতে নাম ওঠে মাত্র এক কোটি ৯০ লাখ আবেদনকারীর।  

বাকি এক কোটি ৩৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে। বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশ থেকে আসামে অনুপ্রবেশ করেছেন। ভারতীয় নাগরিক স্বীকৃতি পেতে তাদের ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে বসবাসের পারিবারিক প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।

তবে বাদ পড়া লোকজন বলছেন, তাদের পূর্ব-পুরুষ এসব প্রমাণ বা নথি সংরক্ষণ করার গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। ফলে অনেকেই তা সংরক্ষণ করেননি। তাই অনেকের কাছেই প্রমাণিত কোনো নথিপত্র নেই।  

সেনাবাহিনী থেকে চাকরি করার পরও এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।  

তবে এ বিষয়ে নানা সমালোচনার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বাদ পড়াদের নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে আবারও খসড়া প্রকাশিত হবে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮/আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।