রোববার (২১ এপ্রিল) সকালে ও বিকেলে দফায় দফায় এ বোমা হামলার পর সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে শ্রীলঙ্কার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রাণহারানোর সংখ্যা ২৯০ জন জানায় সংবাদমাধ্যম। তবে একদিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে সে সংখ্যা ২০ জন বৃদ্ধি পেয়ে ৩১০ জনে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে রোববারের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছেন লঙ্কানরা। নিহতদের স্মরণে দেশজুড়ে তিন মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়া হামলার দায় স্বীকার করেছে জামাত আল-তাওহিদ আল-ওয়াতানিয়া নামের একটি গ্রুপ।
রোববার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উদযাপন করা হচ্ছিলো গির্জাগুলোতে। এর মধ্যেই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কলম্বোর সেন্ট অ্যান্থনি গির্জায় বোমা হামলা হয়। আধঘণ্টার মধ্যেই হামলা হয় কলম্বোর ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেন্ট সেবাস্টিন গির্জা ও ২৫০ কিলোমিটার দূরে বাট্টিকালোয়ার জিওন গির্জায়।
প্রার্থনালয়গুলো যখন কাঁপছিল, সমানে হামলা হতে থাকে কলম্বোর অভিজাত কিংসবারি, সাংগ্রিলা এবং সিনামোন গ্র্যান্ড হোটেলে। এই হোটেলগুলোতে তখন বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক ছিলেন।
গোটা কলম্বোবাসী ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে না উঠতেই দেহিওয়ালা জেলার আরেকটি হোটেলে এবং দেমাতাগোদা জেলার একটি স্থাপনায় ফের হামলা হয়।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সেন্ট অ্যান্থনি ও সেন্ট সেবাস্টিন গির্জা এবং সাংগ্রিলা ও সিনামোন গ্র্যান্ড হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। ইস্টার সানডে উদযাপনের জন্য ধর্মানুরাগীদের সমাগম বাড়তেই ঘটানো হয় বিস্ফোরণ। কাঁদছে শ্রীলঙ্কাসংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে একাধিক গির্জা ও হোটেলের ভেতরের জায়গা। মেঝেতে পড়েছিল রকাক্ত মরদেহ। আক্রান্ত এলাকায় পড়েছিল রক্তের ছোপ।
শ্রীলঙ্কান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩৫ জন বিদেশি রয়েছেন। এদের মধ্যে আমেরিকান, ব্রিটিশ, ডাচ ও ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। আহতদের মধ্যেও শতাধিক বিদেশি রয়েছেন। উভয় সংখ্যাই বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার সকালে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে তাদের আট নাগরিকের প্রাণহানির কথা জানানো হয়।
বর্বরোচিত এ হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা কারফিউ জারি করা হয়। এছাড়া, নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সব রুটে প্লেন চলাচল স্থগিত করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিকেলেই দেশটিতে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপসহ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্লক করে দেওয়া হয়। গতি কমিয়ে দেওয়া হয় ইন্টারনেটেরও। হামলার পর একটি গির্জার ভেতরের চিত্রশ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। বিস্ফোরণগুলোর বেশিরভাগই একটি গোষ্ঠী আত্মঘাতী কায়দায় ঘটিয়েছে। ওই গোষ্ঠীটিরই সদস্য হিসেবে তাদের ধরা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে হামলা চালাতো তামিল গেরিলারা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘তামিল ইলাম’ নামে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৮৩ সাল থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে আসা এই গেরিলাদের প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে ২০০৯ সালে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের দমন করা হয়।
প্রায় এক দশক পরে এমন বর্বর কায়দায় হামলা দুঃস্বপ্নের মতো সামনে এসে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কাবাসীর। তারা বলছেন, তারা ভেবেছেন সহিংসতা হয়তো শ্রীলঙ্কার অভিধান থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু এই ট্র্যাজেডি তাদের বিমর্ষ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
জেডএস