ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নিষেধাজ্ঞার পরও মিয়ানমারের সঙ্গে নৌমহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
নিষেধাজ্ঞার পরও মিয়ানমারের সঙ্গে নৌমহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র!

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও দেশটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক নৌমহড়ায় অংশ নিতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। নৈতিকতার প্রশ্নে মার্কিন সরকারের এমন দ্বিমুখী আচরণে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। 

আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নৌমহড়ায় মিয়ানমার বাহিনীর অংশগ্রহণের বিষয়টি বুধবার (২৮ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের কার্যালয়ের মুখপাত্র জ মিন তুন।
 
আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশটি দেশ নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট।

সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ থেকে থাইল্যান্ড উপসাগরে এ জোটের নৌমহড়া শুরু হবে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অংশ নিতে চলেছে মিয়ানমারও।

দুই বছর আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রোহিঙ্গা নিধন চালায় সেখানকার সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় জাতিসংঘ দেশটির সশস্ত্র বাহিনী প্রধানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে। ইউএন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্তে মিয়ানমার কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হ্লাইংকে ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে অগ্নিসংযোগ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।  

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ওই নিধনযজ্ঞকালে প্রধান ভূমিকা মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখলেও যুক্ত ছিল নৌবাহিনীও। সে সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।  

যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিধনযজ্ঞের অভিযোগে মিয়ানমার সেনাপ্রধানসহ চার উচ্চপদস্থ  কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এসব অভিযোগে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে যখন আরও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি ও একঘরে করার দাবি উঠছে, সেই মুহূর্তে তাদের দলে ভিড়িয়ে নৌমহড়ায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে দেশ-বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা শুরু হয়েছে।  

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের মুখপাত্র জন কুইনলে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হলো আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে জবাবদিহিতার জন্য মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করা। তাদের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নেওয়া নয়।  

রোহিঙ্গা বিষয়ক মানবাধিকার কর্মী তুন কিন যৌথ এ মহড়াকে এক কথায় ‘অত্যন্ত বেদনার’ বলে অভিহিত করেছেন।  

তিনি বলেন, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর প্রধানকে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত করার এক সপ্তাহ পরেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে মহড়া করছে।

এদিকে মিয়ানমারের মুখপাত্র বলেন, আসিয়ানভুক্ত দেশ হওয়ায় আমরা আসন্ন এ মহড়ায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব পেয়েছি। সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ভিন্ন। ওই নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিগত, কিন্তু এ মহড়ার বিষয়টি আসিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সমন্বয়।  

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও এ মহড়াকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রঅঞ্চলে যৌথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে। দেশটির  স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়, আসিয়ানের ১০টি দেশ নিয়ে আয়োজিত এ মহড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্র অঞ্চলে জরুরি নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করার একটি সুযোগ।

যখন বাণিজ্যযুদ্ধ ও হংকং ইস্যুতে ভিন্ন অবস্থান নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা চলছে ঠিক সে সময়ই এ মহড়ার আয়োজন করা হলো। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার নিয়েও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পাল্টাপাল্টি দাবি রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯ 
এইচজে/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।