ব্রিটিশ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের বরাতে সোমবার (২১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়। ব্রিটিশ-মার্কিন গোয়েন্দাদের মতোই অভিযোগ এস্তোনিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের।
আক্রান্ত দেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, রাশিয়ার এই হ্যাকার গ্রুপটির নাম ‘তুরলা’। তারা কাজ করছিল রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির পক্ষে। ইরানি সাইবার-গুপ্তচরদের হ্যাকিং গ্রুপ ‘এপিটি-৩৪’র কম্পিউটার ব্যবস্থা ও সাইবার টুল ব্যবহার করে ‘তুরলা’ এই হ্যাকিং কার্যক্রম চালিয়েছে।
এপিটি-৩৪’র ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে গত ১৮ মাসে ২০টি দেশের বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট-মহল সফলভাবে হ্যাক করেছে তারা।
এই হ্যাকিং অপারেশন যদিও মধ্যপ্রাচ্যে বেশি চলেছে, তবে আক্রমণ হয়েছে ব্রিটেনের বিভিন্ন সংস্থায়ও।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার (জিসিএইচকিউ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পল কাইচেস্টার বলেন, সরকারের পোষ্য একদল হ্যাকার বেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। আর সাইবার-হামলার নিত্যনতুন উপায় তৈরি করছে যেন তাদের অবস্থান ট্র্যাক করা না যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটেনের যোগাযোগ সদরদপ্তরের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার (এনসিএসসি) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা হ্যাকিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে চাইছে, যাতে আক্রমণকারীদের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে যায়।
এনসিএসসি’র পরিচালক কাইচেস্টার বলেন, আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই যে, সাইবার অপরাধীরা যতই মুখো পরুক না কেনো, তাদের চিহ্নিত করার সামর্থ্য আমাদের আছে।
এ ব্যাপারে রাশিয়া ও ইরানের কর্মকর্তারা এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, মস্কো ও তেহরান বরাবরই তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর হ্যাকিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বহু আগে থেকেই সাইবার জগতে রাশিয়া ও ইরানকে প্রধান হুমকি বলে চিহ্নিত করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের এই তালিকায় আরও আছে চীন ও উত্তর কোরিয়ার নাম। বলা হচ্ছে, রাশিয়া ও ইরান সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হ্যাকিং অপারেশন চালাচ্ছে।
তবে, রাশিয়ার ‘তুরলা’ ও ইরানের ‘এপিটি-৩৪’র মধ্যে কোনো যোগসাজশ আছে কি-না, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি তারা।
বরং তারা মনে করে, রাশিয়ার হ্যাকাররা ইরানের সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে তাদের কর্মকাণ্ড চালায়। এনসিএসসি’র পরিচাল কাইচেস্টারের ভাষ্যে, এতে যেন ভিকটিমরা ইরানকেই দোষী মনে করে।
তুরলার কার্যক্রম ‘সাইবার অপরাধমূলক ও বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ান কোনো অপারেশনের জন্য অন্যায়ভাবে ইরানকে দায়ী করা হয়েছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
অবশ্য অন্যের ‘কাঁধে’ চড়ে ছদ্মবেশে সাইবার আক্রমণের অভিযোগ কেবল রাশিয়ার বিরুদ্ধেই উঠছে না। এমন অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধেও রয়েছে।
সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন প্রকাশিত গোপন নথি ও একটি জার্মান সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোও নিজেদের গুপ্তচরবৃত্তিতে বিভিন্ন সময় অন্যদেশি সাইবার-সিস্টেমের সুযোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৯
এফএম/এইচএ/