আঙ্কারা: আর্মেনীয় গণহত্যার ফরাসী অভিযোগের জবাবে এবার ফ্রান্সকেই আলজেরিয়ায় গণহত্যার সঙ্গে জড়িত করে পাল্টা অভিযোগ আনলো তুরস্ক।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমানদের হাতে আর্মেনীয় গণহত্যার ফরাসী অভিযোগের জবাবে তুরস্ক অভিযোগ করেছে, আলজেরিয়ায় উপনিবেশের সময় ফরাসী বাহিনী সেখানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
আর্মেনীয় গণহত্যা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ফ্রান্সের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হওয়ার একদিন পরেই শুক্রবার ফ্রান্সকে লক্ষ্য করে একই অভিযোগ ছুড়ে দিল তুরস্ক।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান বাহিনীর হাতে কথিত আর্মেনীয় গণহত্যার ঘটনা অস্বীকারকে বেআইনি ঘোষণা করে আইন করার একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট হয়েছে ফ্রান্সের পার্লামেন্টে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী ফ্রান্সে কেউ এই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকার না করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
ফরাসী পার্লামেন্টে উত্থাপিত এই বির্তকিত প্রস্তাব পাসের উদ্যোগের প্রেক্ষিতে ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ দুই অংশীদার ফ্রান্স-তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে।
তুরস্কের টেলিভিশনে গত শুক্রবার সরাসরি সম্প্রচারিত বক্তব্যে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারাকোজির উদ্দেশে বলেন, ‘ফরাসীবাহিনীর হাতে আলজেরীয়রা কেমন নির্মমভাবে গণহত্যার শিকার হয়েছিল সে ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট সারকোজির বাবার নিশ্চয় প্রত্যক্ষ জ্ঞান রয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘১৯৪৫ সাল থেকে ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসন শুরুর পর আলজেরিয়ার প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ সরাসরি ফরাসী বাহিনীর হাতে নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। এটা গণহত্যা। এসময় আলজেরীয়দের গণহারে চুল্লিতে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যা করা হয়েছে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে। ’
ফরাসী প্রেসিডেন্ট সারকোজি যদি এই গণহত্যা সম্বন্ধে না জেনে থাকেন তবে বাবা পল সারকোজির কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার পরামর্শ দিয়েছেন এরদোগান।
তিনি বলেন, ‘তার বাবা ১৯৪০ সালের দিকে ফ্রেঞ্চ লেজিয়োনে কর্মরত ছিলেন। আমি নিশ্চিত, তিনি আলজেরিয়াতে ফরাসী গণহত্যার কথা ছেলেকে জানাতে ভুলে গিয়ে থাকবেন। ’
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত দাভুতগলু ফ্রান্সকে মধ্যপ্রাচ্যের একনায়ক রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। গত শুক্রবার তুরস্কে সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের শাসকরা যেমন নির্ধারণ করে, জনগণ কীভাবে চিন্তা করবে বা কথা বলবে। এই মুহূর্তে ফ্রান্সেও সে রকমটিই ঘটছে। ’
এদিকে সারকোজির বাবা পল সারকোজি স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এরদোগানের বক্তব্যকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন ‘আমি কখনও আলজেরিয়ায় যাইইনি, এমনকি মার্সেই শহর ছেড়ে কোথায়ও যাইনি আমি। ’
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার মাসের জন্য ফরাসী লেজিয়োনে কর্মরত থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
অপরদিকে সদ্য প্রয়াত সাবেক চেক নেতা ভাকলাভ হাভেলের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে অবস্থানরত ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শীতল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার তুর্কি বন্ধুর অভিযোগকে সম্মান জানাই। তারা মহান সভ্যতার অধিকারী মহান দেশ, কিন্তু আমাদের অভিযোগকেও তাদের সম্মান দেখাতে হবে। ’
তুরস্কের অতীত ইতিহাস নিয়ে ফ্রান্সের ঘাঁটাঘাঁটি ভাল চোখে দেখছে না আঙ্কারা। ফরাসী পার্লামেন্টে আর্মেনীয় গণহত্যা সংক্রান্ত ভোটাভুটির ফলে তুরস্কের সর্বস্তরে ফ্রান্স বিরোধী মনোভাব আরও বেড়ে গেছে বলে জানাচ্ছে সংবাদ মাধ্যম।
এর ফলে দু’দেশের সম্পর্কে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুই দেশের এই কূটনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব ব্যাপক এবং সুদূর প্রসারী হবে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১১