ঢাকা: খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য বড়দিন একটি বাৎসরিক উৎসব। তবে শুধু বাৎসরিক উৎসবের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকেনি।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আদি বাইবেলের ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে, কুমারী মেরির গর্ভে তাদের মসিহ বা ত্রাণকর্তার জন্ম হবে। স্বামী জোসেফের সঙ্গে বেহেম শহরে আসেন মেরি। আর এখানেই তার গর্ভে জন্ম হয় যিশুর। প্রচলিত কিছু কাহিনী অনুসারে একটি আস্তাবলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যিশু। যদিও বাইবেলের উপাখ্যানে আস্তাবল বা গবাদি পশুর কোনো উল্লেখ নেই। যিশুর জন্ম-সংক্রান্ত প্রথম দিকের চিত্রগুলিতে গবাদি পশু ও যাবপাত্র বেষ্টিত একটি গুহায় যিশুর জন্মদৃশ্য দেখানো হয়। তবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মতে, যিশুর জন্মস্থানটি বেথেলহেমের চার্চ অফ দ্য নেটিভিটির ভেতরে অবস্থিত। অনেকেই মনে করেন, কয়েকজন জ্যোতিষী (ম্যাজাই) স্বর্ণ, গন্ধতৈল ও ধূপ নিয়ে যিশুকে দেখতে যান।
সারাবিশ্বের খ্রিস্টানরা নানাভাবেই বড়দিন উদযাপন করে থাকে। তবে সকল আয়োজনের মধ্যে গির্জার উপাসনায় যোগ দেওয়া সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রথা হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন উপাসনা পদ্ধতিও রয়েছে যিশুর মহিমা স্মরণ করার জন্য। বড়দিনের পূর্বে যিশুর জন্মোৎসব উপলক্ষে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ নেটিভিটি উপবাস পালন করে। আবার পাশ্চাত্যের অধিকাংশ চার্চ পালন করে অ্যাডভেন্ট। বড়দিনের সর্বশেষ প্রস্তুতিটি নেওয়া হয় ক্রিস্টমাস পূর্বসন্ধ্যায়।
উৎসব পালনে যিশুর জন্মদৃশ্য ফুটিয়ে তোলার পার্বণটিও বেশ সুদীর্ঘ ইতিহাসময়। সাধারণত এ সকল চিত্রে মেরি, জোসেফ, শিশু যিশু, স্বর্গদূত, মেষপালক এবং বেথেলহেমের সেই সময়কার দৃশ্যপট তুলে ধরা হয়।
আদি যুগে খ্রিস্টানদের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে মাতা মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। তবে রাশিয়া, জর্জিয়া, মিশর, আর্মেনিয়া, ইউক্রেন ও সার্বিয়ার মতো কয়েকটি ইস্টার্ন ন্যাশনাল চার্চ ৭ জানুয়ারি বড়দিন পালন করে। কারণ এই সকল চার্চ ঐতিহ্যবাহী জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ২৫ ডিসেম্বর জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারের ৭ জানুয়ারি তারিখে পড়ে। সেই থেকেই পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় শীতকালে সূর্য অনেকদিনের জন্য মেঘ ও কুয়াশায় হারিয়ে যায়। সূর্য লুকিয়ে যাওয়ার প্রথম দিন থেকে ৩৫ দিন পর স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা তাদের একজন চরকে দূর পাহাড়ে পাঠিয়ে দিত। সেখান থেকে সূর্যের প্রথম আলোর দেখা পেয়ে সে সূর্যের প্রত্যাগমনের সুখবর নিয়ে জনপদে ফিরে আসত। এ খবর পেয়ে তারা এক জমজমাট উৎসবের আয়োজন করত। এ উৎসবকে ইউলটাইড বলা হতো। এ উৎসবে জ্বলন্ত ইউল কাঠে ঘেরা স্থানে বিরাট ভুরিভোজনের আয়োজন করা হতো। কিছু কিছু স্থানে লোকজন গাছের সাথে আপেল বেঁধে আসন্ন বসন্তকে স্বাগত জানাত।
তবে কালের পরিক্রমায় আজ এই উৎসব শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ জায়গায় দাঁড়িয়ে আজ সারাবিশ্বেই পালিত হয় বড়দিন। তাইতো বড়দিনের জন্য আলাদা করে ছুটির ব্যবস্থা রয়েছে। উপহার আদান-প্রদান, সংগীত, কার্ড বিনিময়, গির্জায় উপাসনা, ভোজ এবং ক্রিসমাস বৃক্ষ, আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য এবং পবিত্র চিহ্ন সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে বড়দিন উৎসব উদযাপনের অঙ্গ।
উৎসবের এই আবহ বাংলাদেশেও লেগেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করবে এই উৎসব। ঢাকার হোটেল সোনারগাঁও, শেরাটন, রেডিসন, ওয়েস্টিনে এ উপলক্ষে চলছে নানা আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১১