ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নতুন ধরনের করোনা দ্রুত ছড়ালেও বেশি অসুস্থ করছে না

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২০
নতুন ধরনের করোনা দ্রুত ছড়ালেও বেশি অসুস্থ করছে না

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন একটি ‘ধরন’ ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে বলে একটি গবেষণায় জোর প্রমাণ মিলেছে। তবে নতুন ধরনে রূপ নেওয়া ভাইরাসটি বেশি মানুষকে সংক্রমিত করলেও ‘খুব বেশি অসুস্থ’ করতে পারছে না বলেও ওই গবেষণায় জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজি এবং করোনা ভাইরাস ইমিউনোথেরাপি কনসোর্টিয়ামের এক গবেষণায় করোনার রূপান্তর এবং সংক্রমণ নিয়ে নতুন এই তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লা জোলার অধ্যাপক এরিকা ওলম্যান সাফায়ার বলেন, করোনার প্রধান ধরনটি এখন মানুষকে সংক্রমিত করছে।

বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সেলে প্রকাশিত এই গবেষণাটি পূর্ববর্তী কিছু কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যা চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রি-প্রিন্ট সার্ভারে প্রকাশ করা হয়েছিল। গবেষকদের জেনেটিক সিকোয়েন্স সম্পর্কিত তথ্যে ভাইরাসটির একটি নির্দিষ্ট সংস্করণে রূপান্তরের ইঙ্গিত মিলেছে।

ওই গবেষক দল শুধুমাত্র জেনেটিক সিকোয়েন্সই পরীক্ষা করেনি, বরং এটি নিয়ে তারা ল্যাবে মানুষ, প্রাণী এবং কোষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। এতে দেখা যায় যে, ভাইরাসটির রূপান্তরিত সংস্করণটি আরও বেশি সাধারণ ও অন্যান্য সংস্করণের তুলনায় বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে।  

নতুন ভাইরাসটি নিজেকে অভিযোজিত করতে পারে বলেও জানিয়েছেন ওলম্যান সাফায়ার।  

ভাইরাসটির রূপান্তর স্পাইকটি প্রোটিনকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ এটি যে কাঠামো ব্যবহার করে সংক্রমিত কোষে প্রবেশ করে সেটিতে প্রভাব ফেলে। ভাইরাসটিকে ভ্যাকসিন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি-না সেটিই এখন পরীক্ষা করে দেখছেন গবেষকরা।

জানা যায়, বর্তমান যেসব ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এসব ভ্যাকসিন ভাইরাসটির পুরোনো স্ট্রেইন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। গবেষকরা করোনার নতুন রূপান্তরকে জি৬১৪ বলেছেন। তারা দেখেছেন, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির ডি৬১৪ নামে প্রথম সংস্করণকে প্রায় পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত করেছে।

গবেষণায় লস অ্যালামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞানী বেত্তে করবের ও তার সহকর্মীরা জানান, তাদের বৈশ্বিক ট্র্যাকিং তথ্য-উপাত্ত দেখাচ্ছে যে স্পাইকে ডি৬১৪ ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় জি৬১৪ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তারা আর জানান, ভাইরাসটি আরও বেশি সংক্রামক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, তারা রোগটির তীব্রতার ক্ষেত্রে জি৬১৪ এর প্রভাবের প্রমাণ পাননি বলেও উল্লেখ করেন।

এই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের মেডিক্যাল অনকোলজির অধ্যাপক লরেন্স ইয়ং বলেছেন, এটা সুসংবাদ হতে পারে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এই গবেষণা বলা হয়েছে- করোনার জি৬১৪ ভ্যারিয়েন্টটি আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে। তবে এটি তত বেশি প্যাথোজেনিক নয়। একটি আশা আছে যে, সার্স-কোভ-২ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটি কম প্যাথোজেনিক হতে পারে।  

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আক্রান্ত করোনা রোগীদের শরীর থেকে নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন গবেষকরা। এর মাধ্যমে তারা করোনার দু’টি ভ্যারিয়েন্টের তুলনা করে দেখেছেন।  

গবেষকরা বলেছেন, মার্চের শুরুর দিকে জি৬১৪ ভ্যারিয়েন্টটি ইউরোপের বাইরে বিরল ছিল। তবে মার্চের শেষের দিকে বিশ্বজুড়েই এর ফ্রিকোয়েন্স বেড়েছে।

করোনার নতুন সংস্করণটির সংক্রমণ উচ্চ শ্বাসনালী- নাক, সাইনাস ও গলায় দ্রুতগতিতে বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। যা ভাইরাসটির সহজে ছড়িয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করবে। তবে ব্রিটেনে হাসপাতালে ভর্তি এক হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীর ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে- নতুন সংস্করণে সংক্রমণ রোগীর শরীরে ভাইরাসটির মূল স্ট্রেইনে আক্রান্তদের তুলনায় খারাপ কিছু ঘটেনি।

সূত্র- সিএনএন

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।