লাহোর : পাকিস্তানের লাহোরে ক্ষতিকারক ওষুধ গ্রহণের ফলে গত তিন সপ্তাহে প্রায় শতাধিক হৃদরোগীর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় ওষুধ কোম্পানির তৈরি ওই ওষুধ গ্রহণের পর মারাত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর শিকার হৃদরোগীরা সবাই পাঞ্জাব ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজির অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তবে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে গড়মিল পাওয়া যাচ্ছে। কোনো কোনো সূত্র মতে- মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ বা ৮০। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৭২। তবে পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের মতে, মৃতের সংখ্যা শতাধিক। বিরাজমান পরিস্থিতিতে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন, দ্য নিউজ ও বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় দেশটির ৩টি ওষুধ কারখানার মালিক যথাক্রমে ওয়াসিম চৌধুরী, তাহির আযম ও চৌধুরী নাদিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দ্য পাকিস্তান ট্রিবিউন। তবে এ ঘটনায় আরো কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হতে পারে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছেন।
পাঞ্জাব ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি পরিদর্শন শেষে এসব মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
এদিকে, এ ঘটনায় লাহোর জুড়ে তীব্র আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ হাজার রোগী ওই একই ধরনের বাতিল ওষুধ গ্রহণ করে থাকতে পারেন।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সাঈদ ইল্লাহি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, লাহোরে আরো ৪১৯ জন হৃদরোগী একই ধরনের ওষুধের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ওষুধ বাজার কব্জা করতে ও হাসপাতালগুলোতে ওষুধ সরবরাহের ফরমায়েশ পেতে স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা এককথায় বেপরোয়া ও কঠিন অবস্থায় পৌঁছেছে। আরো উল্লেখ্য, পাকিস্তানে এখনও ওষুধের নিবন্ধন, মূল্য নির্ধারণ ও লাইসেন্স প্রদান কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এনিয়ে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব রশি টানাটানির সূত্রে ওষুধ প্রস্তুতকারকদের মান নিয়ন্ত্রণ অনেক ক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হয়।
বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে, রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমানোর কাজে হৃদরোগীদের জন্য চিকিৎসকরা ওই ওষুধটি প্রেসক্রাইব করে থাকেন। এদিকে, গত বুধবার থেকে করাচির বিখ্যাত ম্যারিয়ট রোডের ওষুধ বাজার (কাচ্চি গলি) থেকে ওই ওষুধটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই গণমৃত্যুর পেছনে দায়ী হিসেবে সন্দেহভাজন ওষুধগুলোর তালিকায় আছে- মেগা ফার্মার তৈরি কার্ডিওভাস্টিন (simvastatin), ফার্মাওয়াইজের তৈরি সলোপ্রিন (Asprin), আলফা ফার্মার আলফাগ্রিল (Clopidogril), এফ্রোজ ফার্মার আইসোট্যাব, জাফা ফার্মার অ্যটেনোলল ও সুইস ফার্মার কর্কন্ট।
প্রসঙ্গত, এসব ওষুধের মধ্য থেকে কিছু কিছু পাকিস্তানের প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের রোগীরাও বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে থাকেন।
বাংলাদেশ সময় : ১৪৩০ ঘণ্টা, ২৬ জানুয়ারি, ২০১২