ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

জলবায়ু পরিবর্তনে সঙ্কট ও সম্ভাবনা দুইই আছে: প্রতিবেদন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪১, জানুয়ারি ২৭, ২০১২
জলবায়ু পরিবর্তনে সঙ্কট ও সম্ভাবনা দুইই আছে: প্রতিবেদন

লন্ডন: বর্তমান শতকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যুগপৎভাবে সঙ্কট এবং সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। ব্রিটেন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি গবেষণার সমন্বিত  প্রতিবেদনে এই ফলাফল পাওয়া গেছে।



ব্রিটেনে সরকারি উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর এই ধরনের প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিবেদনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সামনের দিনগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা, তাপপ্রবাহ এবং পানিস্বল্পতার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে প্রতিবেদনে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে।

তবে একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু ভালো দিকও উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। যেমন, আর্কটিক (উত্তরমেরু) অঞ্চলের বরফ গলে জাহাজ চলাচলের নতুন পথ বের হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া ঠাণ্ডাজনিত কারণে মৃত্যুর হার বতর্মান সময়ের চেয়ে কমে যাবে ও কৃষি মৌসুম দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে ফসল উৎপাদন বাড়বে এবং এরকম আরো ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

‘ক্লাইমেট চেঞ্জ রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্রিটেনে এইসব সম্ভাবনার বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

প্রায় দু’হাজার পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটেন সরকারের পরিবেশ, কৃষি ও গ্রাম বিষয়ক দপ্তর বা সংক্ষেপে ডেফরা।

বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে সরকারের নীতি নির্ধারণী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিগত প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের পর প্রাপ্ত উপাত্ত এবং ফলাফল থেকে এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কৃষি, বন্যা এবং পরিবহন ব্যবস্থার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে সম্ভাব্য ১১টি প্রধান বিষয়কে সামনে রেখে এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়।

আর এই কাজটি করা হয়েছে মূলত কম্পিউটার মডেলিংয়ের সাহায্যে।

তবে প্রতিবেদন প্রণয়নকারীরা জানিয়েছেন, এতে সংকলিত বহু সম্ভাবনাগুলোর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তাও কম নয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের মতো একটি ব্যাপক বিস্তৃত বিষয়কে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রঅঞ্চল ব্রিটেনের মধ্যে সঙ্কুচিত করে প্রস্তুত এই প্রতিবেদন বৃহত্তর আঞ্চলিক পরিসরে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।
 
প্রতিবেদন প্রণয়নকারীরা অবশ্য বলছেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তন সম্ভাব্য সঙ্কট মোকাবেলায় একটা দিক নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার বদলে এই প্রতিবেদনটি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমস্যাগুলোর ব্যাপারে ধারণা  দিতে পারবে।

তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর ইতোমধ্যেই অনেকে এর বিভিন্ন দিক নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিছু নেতিবাচক সম্ভাবনার কথাও প্রকাশ করা হয়েছে যার শিরোনামগুলো এরকম-

- গ্রীষ্মকালে উষ্ণতা আরো বাড়বে ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে ব্রিটেনে গরমজনিত রোগে প্রাণহানি হবে ৫৮০-৫৯০০ জন।
- ২০৮০ সালের দিকে ব্রিটেনের উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল বিশেষ করে টেমস নদীর অববাহিকায় পানির সঙ্কট দেখা দেবে।
- ২০৮০ সাল নাগাদ বন্যার কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২১০ কোটি থেকে ১২শ কোটি পাউন্ডে।

প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিবাচক সম্ভাবনাগুলো হলো-

- উত্তরমহাসাগর থেকে বরফ গলে যাওয়ার কারণে এশিয়ার সঙ্গে জাহাজ চলাচলের নতুন পথ বের হবে।
- অপেক্ষাকৃত শীতকালের উষ্ণতা একটু বাড়তির দিকে থাকার কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ ঠাণ্ডাজনিত মৃত্যুর হার কমে আসবে। এর সংখ্যা হতে পারে ৩৯০০ থেকে ২৪ হাজারের মধ্যে।
- ২০৫০ সাল নাগাদ ফসল উৎপাদনের মৌসুম দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় গম উৎপাদনের পরিমাণ ৪০ থেকে ১৪০ শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি চিনি ও বিটের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াবে ২০ থেকে ৭০ শতাংশে।
    
তবে প্রতিবেদনটি অনেক সম্ভাবনার কথা বলার কারণে সমালোচকা বলছেন, এদের পর্যবেক্ষণ খুব বেশি ভাসাভাসা। এর ইতিবাচক দিকগুলো রাজনীতির নীতি নির্ধারক, ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য খুব বেশি উপকারে আসবে। হতে পারে এটা একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা।

তাছাড়া, শুধু কম্পিউটার মডেলিংয়ের সাহায্যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে সুতরাং এর ফলাফলগুলো ব্যাপকভাবে অনিশ্চিত।
 
তবে এই সীমাবদ্ধতাগুলো গবেষকরা স্বীকার করেছেন। তারা স্বীকার করেছেন, ভবিষ্যতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের হার কত দ্রুত বাড়বে, পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের দূষণ কোন মাত্রায় হবে বা হিমশৈলগুলো কত দ্রুত গলে যাবে সে ব্যাপারে তাদের সঠিক ধারণা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।