ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন: কংগ্রেস-বিজেপি’র যত প্রতিশ্রুতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:৪০, জানুয়ারি ২৭, ২০১২
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন: কংগ্রেস-বিজেপি’র যত প্রতিশ্রুতি

নয়াদিল্লি: ভারতের উত্তর প্রদেশের আলোচিত ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার আগেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণার লড়াইয়ে কংগ্রেসকে টেক্কা দিচ্ছে বিজেপি।

ভারতে ক্ষমতার রাজনীতির সবচেয়ে উত্তপ্ত কেন্দ্র  উত্তর প্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি শুক্রবার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি সমেত ইশতেহার নিয়ে হাজির হয়েছে।

একই সঙ্গে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসও তাদের প্রতিশ্রুতির ফিরিস্তি তুলে ধরেছে।

এছাড়া স্থানীয় বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর ‘ডোন্টকেয়ার’ আত্মবিশ্বাস তো রয়েছেই।

তাই ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যটিতে অনুষ্ঠেয় বিধানসভা নির্বাচনে এবার ত্রিমূখী লড়াই হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচিত হতে পারলে রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন ২০ লাখ চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যের ভূমি অধিগ্রহণের পুরনো আইন সংস্কার এবং জনসংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘুদের জন্য কোটা সংরক্ষণেরও প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাদের ইশতেহারে।

তবে রাজ্যের আসনগুলোর দিকে শ্যেণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও প্রতিশ্রুতি দেওয়াতে পিছিয়ে নেই। উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে জয়লাভ কেন্দ্রে ক্ষমতায় যাওয়ার ভবিষ্যত অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় বলেই সবগুলো দলই কোমর বেঁধে নেমেছে।

বিজেপি বেশ চমকদার ইশতেহার নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। জিতলে রাজ্যের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে গরু দেওয়া হবে, প্রত্যেক শিক্ষার্থী সস্তায় ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট কম্পিউটার, বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন চাকরির প্রতিশ্রুতি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধী শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান লোকাযুক্ত  গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে তারা।

সবশেষে হিন্দু মৌলবাদী বিজেপির মোক্ষম অস্ত্র সাম্প্রদায়িক স্বার্থ উস্কে দেওয়ার কৌশল তো রয়েছেই। ভোটে জিতলে এবার আর রামমন্দির নির্মাণ কেউ ঠেকাতে পারবে না মার্কা উগ্র কথাবার্তাও বলছে তারা। ‘সব বাধা পায়ে দলে’ অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণের দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে তাদের ইশতেহারে।

তবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি নিয়ে ভোটারদের সামনে উপস্থিত হলেও বিজয়ের জয়মাল্য কার গলায় শোভা পাবে তা জানা যাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পরই। তার আগে জানা যাক প্রধান দুই দলই জনগণের জন্য কী কী প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছে-
 
১) নারীদের অবস্থার উন্নয়নে

বিজেপি- নির্বাচনে বিজয়ী হলে লোকসভা এবং বিধানসভাসহ সব সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করবে

কংগ্রেস- ভারতে নারীদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ এই  রাজ্যে ঘরে-বাইরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজ্যের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। এর পাশাপাশি প্রত্যেক জেলায় একটি করে নতুন থানা স্থাপনেরও অঙ্গীকার রয়েছে।

২) তাঁতীদের উন্নয়নে-

কংগ্রেস- রাজ্যের তাঁতীদের উন্নয়নের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ হাতে নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি রাজ্যের তিন লাখ তাঁতী যাতে সহজ শর্তে ঋণ পায় তার ব্যবস্থা করারও প্রতিশ্রতি রয়েছে।

বিজেপি- কংগ্রেসের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতির জবাবে বিজেপির প্রতিশ্রুতিতে অভিনবত্ব রয়েছে এ কথা মানতেই হবে। জিতলে রাজ্যের প্রত্যেক তাঁতী এবং কারুশিল্পীকে ক্রেডিট কার্ড দেবে তারা।

৩) কর্মসংস্থানের সুযোগ

বিজেপি- রাজ্য থেকে বেকারত্বকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হবে। ক্ষমতায় আসলে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে প্রায় এক কোটি নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। পাশাপাশি রাজ্যের শিল্প বিকাশের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ না পেয়ে প্রতি বছর রাজ্য থেকে চাকরির খোঁজে রাজধানী দিল্লি এবং মুম্বাইয়ে যাওয়ার হার কমাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানায় তারা।

কংগ্রেস- নির্বাচিত হতে পারলে রাজ্যে অতিসত্বর ২০ লাখ চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

৪) সংখ্যালঘুদের জন্য কোটা সংরক্ষণ (অন্য সবগুলো ক্ষেত্রে দু’দলই সবকিছু বাড়ানোর কথা বললেও এখানে কঙগ্রেস ো বিজেপি নিয়েছি বিপরীতমুখী অবস্থান)

বিজেপি- রাজ্যের পশ্চাৎপদ সংখ্যালঘুদের জন্য কেন্দ্রীয় ইউপিএ সরকারের চাপিয়ে দেওয়া ৪.৫ শতাংশ কোটা বাতিলের পদক্ষেপ নেবে।

অর্থাৎ বিজেপি নির্বাচিত হলে সংখ্যালঘুদের জন্য সামনে ভালই বিপদ অপেক্ষা করছে।

কংগ্রেস- রাজ্যের ১৮ শতাংশ মুসলিম ভোটের দিকে তাকিয়ে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের পিছিয়ে থাকা মুসলিমদের জন্য কোটা সংরক্ষণ বাড়ানো রাহুল গান্ধীর অন্যতম এজেন্ডা। এই কোটা সংরক্ষণকে যৌত্তিকভাবে বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে তারা। এছাড়া সংখ্যালঘুদের মধ্যেও সবচেয়ে পশ্চাৎপদদের জন্য কোটা ব্যবস্থা আরও  সম্প্রসারিত করার আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেস।

৫) শিক্ষার্থীদের জন্য

বিজেপি- রাজ্যের স্কুল কলেজের প্রত্যেক শিক্ষার্র্থীকে স্বল্পমূল্যে ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার দেবে। এর মধ্যে রয়েছে ১০০০ রুপির মধ্যে ট্যাবলেট এবং ৫ হাজার রুপির মধ্যে ল্যাপটপ দেওয়ার অঙ্গীকার ।

কংগ্রেস- ঘরে বাইরে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি।

৬) অবকাঠামো উন্নয়নে

কংগ্রেস- রাজ্যে হারানো অবস্থান ফিরে পেতে মরিয়া কংগ্রেস রাজনৈতিক উত্থানের আকাঙ্ক্ষায় রাজ্যের পিছিয়ে পড়া বুন্দেলখণ্ড, পুর্বাঞ্চল এবং তরাই এলাকাসহ সমগ্র রাজ্যের অবকাঠামো উন্নয়নে প্যাকেজ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে।

এছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে উত্তর প্রদেশে রাজধানী দিল্লির মতো মেট্রোরেলের নেটওয়ার্ক চালুরও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিজেপি- অবকাঠামো খাতে সুনির্দিষ্ট কিছু ঘোষণা না করলেও বিজেপি তাদের কথামত বিজেপি শাসিত রাজ্য বিহার এবং গুজরাটের মতো উন্নয়নের ধারা এই রাজ্যেও বইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

৭) খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা

বিজেপি- রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় ক্রমবর্ধমান মস্তিষ্কপ্রদাহ (এনসেফালাইটিস) রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। এছাড়া রাজ্যের বিপিএল (বাংলাদেশের ভিজিএফ সমতুল্য) কার্ডধারী প্রান্তিক এবং দুঃস্থ জনগণকে প্রতি কিলোগ্রাম ২ রুপি দরে গম দেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।

কংগ্রেস- রাজ্যের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাস্তবানুগ ব্যবস্থা নেবে। অভাবী এই রাজ্যে অনাহারে মৃত্যুর মতো ঘটনা প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন পাসে উদ্যোগ নেবে।

৮) লোকাযুক্ত আইন

বিজেপি দুর্নীতি বিরোধী জবাবদিহিতামূলক অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন লোকাযুক্ত আইন প্রতিষ্ঠা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে তাদের ইশতেহারে। তবে এ ব্যাপারে কংগ্রেসের তরফ থেকে কোনো সুনিদির্ষ্ট প্রতিশ্রুতি নেই।

৯) অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ- এবার নির্বাচিত হতে পারলে সব বাধা তুচ্ছ করে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদের ধ্বংস্তুপের ওপর রামমন্দির নির্মাণ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি।  

১০) ভূমি অধিগ্রহণ আইন সংস্কার

কংগ্রেস- ভূমি অধিগ্রহণের বর্তমান পুরনো আইন সংস্কার করে নতুন আইন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং জমিহারা ব্যক্তিরা যেন হারানো জমির বদলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায় তা নিশ্চিত করার জন্য এই আইন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে বিজেপি কিছু বলেনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।