ঢাকা, বুধবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: পিছিয়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২২, জানুয়ারি ২৮, ২০১২
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: পিছিয়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকা: বিগত বছরে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঝড় বয়ে গেছে। সংবাদকর্মীদের জন্য এ বছরটি যতোটা কঠিন ছিল তা আগে কখনো হয়নি।



স্বাধীন সাংবাদিকতার আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টারস উইথআউট বর্ডারস গত বুধবার তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীন সাংবাদিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ২৭ ধাপ নেমে গেছে। গত বছর পুঁজিবাদ বিরোধী আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া বহু সাংবাদিককে বিনা কারণে আটক করার জন্য এই অবনতি হয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখন ৪৭তম অবস্থানে নেমে গেছে।

এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক পেছনে রয়েছে সম্মিলিতভাবে কমোরোস, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা এবং রোমানিয়া।

রিপোর্টারস উইথআউট বর্ডারস বলছে, বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বার্ষিক স্বাধীন গণমাধ্যম সূচকে ব্যাপক উঠানামা হয়েছে। সরকারগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংরক্ষণে কতোটা প্রতিশ্রুতিশীল এই সূচকের মাধ্যমে তার মূল্যায়ন করা হয়েছে।

প্যারিস ভিত্তিক এই বেসরকারি সংগঠনটি বিগত ২০১১ সালে প্রতিবাদ দমনের প্রক্রিয়া কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তার মূল্যায়ন করতে গিয়ে ‘ক্র্যাকডাউন’ শব্দটি ব্যবহার করেছে।

তবে তাদের হিসেবে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে খুব বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গণমাধ্যম সবচে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে ফিনল্যান্ডে। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে, এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রিয়া।

সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ইরিত্রিয়া এবং এর ঠিক আগের অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া।

অবশ্য শুধু যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের অবনতি হয়েছে তা নয়, এই তালিকায় অবনতির দিকে আরো রয়েছে- বাহরাইন। সম্প্রতি সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরকারের দমনমূলক আচরণের কারণে ২৯ পয়েন্ট খুইয়েছে দেশটি।

মিশর ও সিরিয়ার কম হলেও কয়েক পয়েন্ট কমেছে। এরা রয়েছে যথাক্রমে ১৬৬ ও ১৭৬তম অবস্থানে।

সংগঠনটির বিবেচনায়, ইরান ও চীনের সঙ্গে সিরিয়া তাদের বাস্তব অবস্থার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে ফলে তারা সন্ত্রাসের বেড়াজালে আটকা পড়েছে।

এদিকে সাংবাদিকদের জন্য সবচে বিপজ্জনক স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে পাকিস্তান। স্বাধীন গণমাধ্যমের সবদিক বিবেচনায় ইরিত্রিয়ার অবস্থান সবার নিচে। সিরিয়াতে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতায় ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটি এযাবতকালের মধ্যে সবচে খারাপ (১৭৬তম) অবস্থানে নেমে গেছে।

অপর দিকে তালেবান, চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা এবং রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর অব্যাহত হুমকির মুখে থাকার কারণে আফগানিস্তানের অবস্থান ১৫০তম আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৫১তম।

গত বছর ১০জন সাংবাদিক নিহত হওয়ার কারণে পাকিস্তানকে সবচে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর মধ্যে বুলগেরিয়া ৮০তম, গ্রিস ৭০তম এবং ইতালি ৬১তম। শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এই দেশগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার বিষয়টি সেভাবে বিবেচনায় নেয়নি বলে মনে করছে সংগঠনটি।

তালিকায় সদ্য গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করা লিবিয়ার অবস্থান ১৫৪তম এবং ইয়েমেনের অবস্থান ১৭১তম। এই দুই দেশের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত আর তারা গণমাধ্যমের ব্যাপারে কী ধরনের অবস্থান নেবে তাও অনির্ধারিত বলে মন্তব্য করেছে রিপোর্টারস উইথআউট বর্ডারস।

মিশরের অবস্থাও অনেকটা সেরকম। ৩৯ ধাপ নেমে গিয়ে এখন তার অবস্থান ১৬৬তম।

চলমান সিহংসতার খবর সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, অভ্যন্তরীণ খবরে সম্পূর্ণ সেন্সরশিপ আরোপ এবং তথ্য বিকৃতির কারণে সিরিয়ার অবস্থানে নেমে গেছে ১৭৬ এ।

গত বছর আরব বিশ্বে শুরু হওয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলন কেমন নিষ্ঠুরভাবে দমনের চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিবেদনে তার ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে।

বিরোধীদের আটকের কারণে এশিয়ার ভিয়েতনামের অবস্থান নেমে গেছে ১৭২এ। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে জনগণের অসন্তোষ দমনে তথ্য প্রবাহের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোয় চীনের অবস্থান ১৭৪তম।

অন্যদিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থার সবচে বেশি অবনতি হয়েছে। জিবুতি ৪৯ ধাপ নেমে গিয়ে তালিকায় ১৫৯তম অবস্থানে স্থান পেয়েছে। মালয় ৬৭ ধাপ নেমে ১৪৬তম অবস্থানে এবং ৪৩ ধাপ নেমে গিয়ে ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে উগান্ডা।

রিপোর্টারস উইথআউট বর্ডারস সর্বশেষ বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে গণঅভ্যুত্থান, পশ্চিমে ওয়ালস্ট্রিট দখল আন্দোলন এবং চীনে অব্যাহত প্রতিবাদ বিক্ষোভ গণতন্ত্রের উন্নয়নে কাজ করার জন্য সাংবাদিকদের একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু আন্দোলন প্রতিবাদের পথ রুদ্ধ করতে সেই সঙ্গে তারা সরকারেরও টার্গেটে পরিণত হয়েছে। অনেক সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, কেউ কেউ পেশাগত জটিলতার মুখেও পড়েছে।

প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, নাগরিক স্বাধীনতার খর্ব করতে বা দমিয়ে রাখতে গিয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে প্রথমেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে হয়। স্বৈরাচার সব সময় অবাধ তথ্য প্রবাহকে ভয় পায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।