ব্রাসিলিয়া: নিয়ন্ত্রণহীন ভোগবাদী অর্থব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামী জুনে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদ বিরোধী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ওয়ার্ল্ড সোস্যাল ফোরাম। গত রোববার ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রিওতে জড়ো হওয়া পুঁজিবাদ বিরোধী কয়েক হাজার বুদ্ধিজীবী, কর্মী, সমালোচক এই ডাক দেন।
ওয়ার্ল্ড সোস্যাল ফোরাম নামের সংগঠনের আয়োজনে রিওতে পাঁচ দিনব্যাপী সম্মেলনে বিদ্যমান বিশ্বঅর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় দ্রুত ও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে বিশ্বনেতাদের চাপ দেওয়ার বিষয়ে জোর দেন। এ লক্ষ্যে জনগণকে রাজপথে সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
ওয়ার্ল্ড সোস্যাল ফোরামে অংশ নেয় সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা আরব বসন্ত, স্পেনের ‘বিক্ষুব্ধ’ আন্দোলন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট, অকুপাই লন্ডন, চিলির ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
সম্মেলনে বক্তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ৫ জুন রাস্তায় নেমে পড়ুন। তারা আরও বলেন, সামাজিক ন্যায় বিচারের দাবিতে এই প্রতিবাদ আন্দোলন জরুরি।
ফোরামটি একই সঙ্গে আগামী ২০ ও ২২ জুন রিওতে অনুষ্ঠেয় টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের সমান্তরালে সামাজিক আন্দোলনের ব্যানারে ‘জনতার সম্মেলন’ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সাল থেকে বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক চতুর্থ বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন রিও+২০ এর আয়োজন হয়ে আসছে। এই সম্মেলন থেকে সামাজিক উন্নয়নমুখী এবং সবুজ অর্থনীতির উন্নয়নে অঙ্গীকার করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি চাপ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিশ্ব থেকে ক্ষুধার (অনাহারে মৃত্যু) মূলোৎপাটনের বিষয়টিও অগ্রাধিকার পায়।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া আরব বসন্ত, স্পেনের ‘বিক্ষুব্ধ’ আন্দোলন, ওয়ালস্ট্রিট দখল, চিলির ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা রিও সম্মেলনের তথাকথিত ‘সবুজ অর্থনীতি’র সমালোচনা করে বলেন, এই ধারণা প্রকৃতপক্ষে বহুজাতিক করপোরেশনগুলোকে একচেটিয়া লাভের সুযোগ করে দেয়।
ফোরামের একজন প্রতিষ্ঠাতা চিকো হুইটেকার বলেন, ‘রাজনৈতিক এবং অর্থনেতিক অভিজাতরা সংখ্যায় মাত্র এক শতাংশ, যারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। আর আমরা এক শতাংশ যারা পরিবর্তনের কথা বলছি। বাকি ৯৮ শতাংশ তাহলে কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘এমন অনেক লোক রয়েছে যারা সুখেই রয়েছে কারণ নিত্য নতুন ভোগ্যপণ্য পাচ্ছে তারা। তবে এর মধ্যে অনেকে রয়েছে যারা সামগ্রিক বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং অসন্তুষ্ট। শেষোক্তদের হয়ে কথা বলাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। ’
ভেনিজুয়েলার সমাজতান্ত্রিক নেতা এদগারদো লানদার বলেন, ‘আমরা যদি আয় বৈষম্যের ইস্যুটি তুলতে না পারি তাহলে এর সমাধানও করতে পারব না। ’
অকুপাই লন্ডন আন্দোলনের স্যাম হ্যালভরসেন তার সঙ্গে একতম পোষণ করে বলেন, ‘যদি বিদ্যমান ব্যবস্থা পুনর্বণ্টন এবং বৈষম্য কমাতে না পারে তাহলে সে কাজটি আমাদেরই করতে হবে। ’
প্রসঙ্গত, ওয়ার্ল্ড সোস্যাল ফোরাম একটি সামাজিক আন্দোলন জোট। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিরুদ্ধে এই ফোরামটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতদের নিয়ে গঠিত এই ফোরামটি (ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম) প্রতি বছর সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে সম্মেলন করে।
ওয়ার্ল্ড সোস্যাল ফোরামের সম্মেলনের উদ্বোধনী দিন গত বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উন্নয়ন পরিকল্পনা নির্ধারণের আহ্বান জানান। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, বৈষম্য হ্রাস এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণের ওপর জোর দেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।
বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কটকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ঘণীভূত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সাধারণ জনগণ বা যারা পরিবর্তন প্রত্যাশী তাদের মধ্যে নানা বৈচিত্র সত্ত্বেও তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছে বলে উল্লেখ করেন ফোরামের সমন্বয়ক ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কানদিদো গ্রিজিভোস্কি।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড সোস্যাল ফোরামের ধারণার অঙ্কুরোদগম হয় ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের সম্মেলনের বিরুদ্ধে রাজপথের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে।
তবে এটি সাংগঠনিকভাবে নিয়মিত সম্মেলন স্থল নির্ধারণ করে আজ থেকে ১২ বছর আগে ব্রাজিলের পোর্তো আলেগরে‘তে। সেসময় বিশ্বব্যাপী এর কর্মী-সর্মথক ছিল ২০ হাজার। এ বছর সম্মেলনে যোগ দিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার।
ফোরামের পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর মিশরের রাজধানী কায়রোতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১২