ঢাকা: সম্প্রতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকার পতনের জন্য সেনাবাহিনীর ভেতরে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়। এই অপচেষ্টা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর বিরুদ্ধে আবারও এক আঘাত।
কূলদীপ নায়ারের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের এই ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পেছনে আছে কিছু গোড়া উগ্রপন্থী এবং সাবেক সেনাসদস্যের হাত। আর এদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া স্বশস্ত্র সংগঠন উলফা এবং নাগা বিদ্রোহীরা।
বাংলাদেশের এই্ অবস্থায় ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো। একই সঙ্গে অতিসত্ত্বর এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যাতে বাংলাদেশ বুঝতে পারে ভারত তার এবং তার মানুষের পাশে আছে বলেও মনে করেন নায়ার।
তার ভাষায়, ‘বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিণীর মধ্যে যে একটা অভ্যুত্থান চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র হচ্ছে এ সম্পর্কে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ঢাকাকে আগেই সতর্ক করে দেয়। যেমন দিয়েছিলো ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের ১৫ জন সদস্য সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার আগ। ে কিন্তু তখন ঢাকার উচ্চপদস্থরা নিজেরাই ওই ক্যু এর মধ্যে ছিল। যার কারণে তারা এ সম্পর্কে কিছুই করেনি। এর ফলে যা হবার তাই হয়েছিল।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী যে দেশের ক্ষমতা দখলে আগ্রহী নয় তা পরিস্কার হয় ২০০৮ সালে, যখন তারা বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেয়। যার কারণে শেখ হাসিনা তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে আসেন। নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দশেরে বভিন্নি ক্ষত্রেরে জঞ্জাল সাফ সুতরোর কাজে নেমেছিল তখন দেখা যায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার বিএনপি’র অনেক নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকই দুর্নীতিগ্রস্থ। এমতাবস্থায় সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন এই ভেবে যে রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের ফলে আবারও সেই আগের অবস্থাই ফিরে আসবে। যদিও সেনাবাহিনী বেসামরিক শাসককেই ক্ষমতার জন্য পছন্দ করেছিল।
ভোটাররা যা চেয়েছিল তা তারা পাচ্ছে না এবং প্রশাসনের কাছ থেকেও সকল ক্ষেত্রে সাড়া পাচ্ছে না। দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতি পিঠাপিঠি অবস্থান করছে। যদিও মানুষ এই মন্দলোকদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী এখানে কিছুই করতে পারছে না কারণ গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
‘প্রবাসী কিছু বাংলাদেশির প্ররোচনায় সেনাবাহিনীর সাবেক এবং বর্তমান কিছু মধ্যম সারির গোড়া উগ্রপন্থী সেনাসদস্য এক প্রকার বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। ’ সেনাবাহিনী এই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
খোলাচোখে এটি গোড়া উগ্রপন্থী এবং কিছু ক্ষুব্ধ সেনা সদস্যের কাজ। গোড়া উগ্রপন্থীরা এই সরকারের প্রতি খুশি নয় কারণ হাসিনা সরকার অনেক বেশি উদারনৈতিক এবং সেক্যুলার। অন্যদিকে আরও একটা শক্তি আছে যাদেরকে ভারত সরকার কোনঠাসা করার সকল চেষ্টাই করছে।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ইসলাম পন্থীরা প্রবেশ করেছে বলে শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন। এটা এক প্রকার অশুভ লক্ষণ কারণ পাকিস্তানেও একই ঘটনা ঘটেছে।
আমার কাছে তথ্য আছে, এই অভ্যুত্থান চেষ্টার নেতারা ভারতের প্রতিক্রিয়াশীলদের সহায়তা পেয়েছিল। ঊলফার একটি গ্রুপের পাশাপাশি মনিপুরের নাগা বিদ্রোহীরা এই ষড়যন্ত্রের অংশ। এটা আশ্চর্য যে বাংলাদেশ যেখানে তাদের মাটিতে ভারত বিরোধী কোনো শক্তিকে মাথাচাড়া দিতে দেয় না, অতীতে তাই দেখা গেছে। কিন্তু ভারত এক্ষেত্রে নিশ্চেষ্ট এবং অকার্যকর।
আমার মনে পড়ে তখনকার কথা যখন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। নয়াদিল্লি ঢাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সেসময় পাঁচ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ওই পরিকল্পনাটি বেশ ভালো ছিল। কিন্তু নয়াদিল্লি এখন অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে।
বৃহৎ দৃষ্টিকোন থেকে নয়াদিল্লিকে এই দুর্ণামের ভাগ নিতে হবে। কারণ নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে সংযোগ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টা শুধুমাত্র সতর্কতাই নয় বরং নয়াদিল্লি সরকারের জন্য এটা একটা সুযোগও বটে বাংলাদেশের জন্য কিছু করে দেখানোর। যাতে শেখ হাসিনা সরকার বুঝতে পারে ভারত সরকার বাংলাদেশ এবং এর জনগোষ্ঠীর পাশে আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কও ভালো করে ফেলতে হবে ভারতকে।
অন্য এক ঘটনায় বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ভারতীয় সেনাদের হাতে এক বাংলাদেশি লাঞ্ছিত হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্প্রতি হয়ে যাওয়া এই ঘটনাটি তুলে ধরে। সেখানে দেখানো হয় ভুলবশত একজন বাংলাদেশি সীমান্ত অতিক্রম করায় ভারতীয় পুলিশ কিভাবে তাকে নির্যাতন করছে। এ সকল বিষয় নিয়েও এগিয়ে আসা উচিত এখনই ভারত সরকারের। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১২