মানিকতলা এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সামসুল। ফিরেছেন প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে।
২৯ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ হয়ে শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই অবশ্য মূলত ডা. আসিফের দায়িত্বে ছিলেন এই রোগী। আসিফ জানান, ৬৭ বছরের ওই রোগীকে বাঁকুড়া থেকে অক্সিজেন দেওয়া অবস্থায় আইসিইউ ভ্যানে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বৃদ্ধের শরীরে অক্সিজেন তখন ছিল ৭০-এর আশপাশে!
জানতে পারেন, পেসমেকার রয়েছে। কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সামসুলকে দ্রুত ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। ৭২ ঘণ্টা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। আসিফ বলেন, ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে রোগী সাড়া দিতে থাকেন। বেশ কয়েক দিন পরে সাপোর্ট থেকে বের করে আনা হয় তাকে। আর সাধারণ শয্যায় দেওয়া হয় মাত্র দিন দু’য়েক আগে। এখন অবশ্য শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক। শুক্রবারই সামসুলকে ছুটি দেওয়া হলো।
‘এর চেয়ে ভালো ঈদি (ঈদের উপহার) আর কি-ই বা হতে পারে জীবনে!’ ছলছল চোখে বলে উঠলেন মির্জা সামসুল। তাই ছুটি পেলেও বাড়ি যাওয়ার আগে ঈদের নমাজ হাসপাতালে বসেই পড়ার ইচ্ছে জানিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা সেই অনুমতি মঞ্জুরও করেন। যে ঘরে তিনি ছিলেন, সেখানেই নমাজ পড়েন।
ছেলে মির্জা ইমরানের সঙ্গে ঘরে ফেরার পথে বৃদ্ধ বলেন, করুণাময় ঈশ্বর আর ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মিলেমিশে আমাকে নতুন জীবন দিলেন। আমার মতো সব করোনা রোগীই যেন সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে পারেন, এই ছিল আজকের বিশেষ প্রার্থনা। এমন সম্প্রীতির উৎসবে পরিবার, বন্ধু, স্বজনের কাছে ফিরতে পারলাম চিকিৎসক থেকে নার্স— সবার চেষ্টায়।
সামসুলের চিকিৎসক আসিফের কথায়, হাসপাতালে সারাদিন ধরে এত করোনা রোগীর ভিড়। গুরুতর অসুস্থ, অসহায় মুখগুলো দেখে আর বাড়ি যেতে মন চায় না। মনে হয়, তাদের সেবা করাটাই ঈদের দিনের পবিত্র কর্তব্য। এরই মধ্যে ছুটি পাওয়া রোগী সামসুলকে দেখে তারও মনে হয়েছিল নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, গোটা মানবজাতির জন্য আজ বিশেষ প্রার্থনার উপযুক্ত মুহূর্ত। তাই কাজের ফাঁকে তিনিও নিজের ঘরে নমাজ পড়ে ফেলেন।
সূত্র: আনন্দবাজার
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২১
এএ