কলকাতা: দুই কিশোর-কিশোরী, খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওরা। পড়ে কলকাতার একটি স্কুলে।
দ্বীপশিখা আর সুদীপ্ত দু’জনেই পড়ত কলকাতার জুলিয়েন ডে স্কলে অষ্টম শ্রেণীতে। গত বুধবার সুদীপ্তদের চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে দুই বন্ধু একত্রে। এর আগে লিখে গেছে একটি সুইসাইড নোট।
নোটটি অবশ্য কাউকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয় আর তাদের আত্মহত্যার জন্য তারা কাউকে দোষী করেও যায়নি। নোটে লিখেছে, ‘বাবা-মাকে হতাশ করার জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা জন্মেছিলাম একটা ভুল দেশে ভুল সময়ে। ’
গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালের নেওয়ার পর দীপশিখাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সুদীপ্তর অবস্থা আশঙ্কাজনক, তার মাথায় অস্ত্রোপচার চলছে।
গত বুধবারও দুই বন্ধুই স্কুলের পিটি ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল। প্রধান শিক্ষক তাদের ডেকে বললেন, এই জন্য তাদের অভিভাবকের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। সেই সঙ্গে স্কুল থেকে বহিষ্কারেরও হুমকি দিলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই দুই বন্ধু সুদীপ্তদের বাড়ি গিয়ে সুইসাইড নোট লিখে ছাদ থেকে একসঙ্গে লাফ দিয়েছে।
ছোট্ট ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান সুদীপ্তর বোন সুস্মিতা চাকি বলেন, ‘আমি জানতেই পারিনি কখন ও ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে গেল। কিন্তু ওর সঙ্গে কোনো মেয়েকে দেখিনি, এমনকি বাড়ির বাইরেও নয়। পাশের বাড়ির কাজের মেয়ে এসে আমাকে বলল, আমার ভাই রাস্তায় পড়ে রয়েছে। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। রাস্তায় নেমে দেখলাম সত্যি সত্যি আমার ভাইটি রাস্তায় পড়ে রয়েছে, পাশে আরেকটি মেয়েও। ’
তাদের দু’জনকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়ার কথা অবশ্য অস্বীকার করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম মেকনামারা। তিনি বলেন, ‘পিটি ক্লাসে অনুপস্থিতির কারণ জানতে আমি তাদের খালি আমরা রুমে ডেকে নিয়েছিলাম। স্কুল থেকে বহিষ্কার বা ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়ার কোনো হুমকি দিইনি। ’
ওই দুই কিশোর-কিশোরীর বাবা-মারা অবশ্য এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। তাদের কোনো মন্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি।
এদিকে মৃত দীপশিখার স্মরণে স্কুল ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি সুদীপ্তর জন্য বিশেষ প্রার্থনারও আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১২