মালে: অভ্যুত্থানকারী পুলিশ বন্দুকের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে বলে জানিয়েছেন সদ্য পদত্যাগী মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। তিনি জানান, রক্তপাত এড়াতেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।
ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। এদিন সরকার বিরোধী বিক্ষোভে সাধারণ জনগণের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরাও যোগ দিলে রাজপথে নিরাপত্তা বাহিনী-জনতা সংঘর্ষ বাধে। অবশেষে পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট।
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে ফৌজদারি আদালতের প্রধান বিচারপতি আবদুল্লাহ মোহাম্মদকে গ্রেপ্তারের পরেই মূলত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিচারপতি আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মামুন আব্দুল গাইয়ুমের একান্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তার গ্রেফতারে গাইয়ুমের দলও বিক্ষোভে নামে। সেই সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসানও এই গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানান। গত কয়েক সপ্তাহের এই বিক্ষোভের অবসান ঘটল গত মঙ্গলবার পুলিশের অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।
উল্লেখ্য, বিচারপতি আব্দুল্লাহ মোহাম্মদের গ্রেফতারের সমালোচনা করার জেরে গত ২৪ জানুয়ারি পদত্যাগ করেছেন মালদ্বীপের কূটনীতিক কর্মকর্তা সার্কের মহাসচিব ফাতিমা দিয়ানা সাইদ।
বুধবার একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ বলেছেন, ‘এটা অবশ্যই সেনা অভ্যুত্থান। যেকোনো সংজ্ঞায় যেকোনো বিবেচনায় একে অভ্যুত্থান বলা যায়। এটা একটা রক্ষপাতহীন অভ্যুত্থান কারণ আমি এতে কোনো অবস্থান নিইনি। আমার অবস্থানে দৃঢ় থাকতে চাইনি, আর একারণেই কোনো রক্তপাত হয়নি। ’
তিনি কেন তাহলে পদত্যাগ করলেন? এই প্রশ্নে নাশিদ বলেন, ‘কারণ আমি আমার জনগণের ওপর তাদের গুলি করতে দিতে চাইনি। তারা আমাকে হুমকি দিচ্ছিল এবং জনগণকেও হুমকি দিচ্ছিল। আমি তা চাইনি। ’
এরপরও নাশিদের বিশ্বাস, জনগণের সমর্থন এখনো তার প্রতিই। আগামী নির্বাচনে আবারও নির্বাচতি হয়ে দেশের ক্ষমতায় আসার আশা ছাড়ছেন না তিনি। খুব শিগগির রাজনীতিতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন নাশিদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, দেশের মানুষ আমাদের সাথে আছে। ’
এদিকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেও বুধবার নাশিদের বাসভবন সেনা বাহিনী
ঘরে রেখেছে। তবে সাবেক প্রেসেডন্টের পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নয়া প্রেসিডেন্ট।
সেই সঙ্গে নাশিদের ভ্রমণ এবং অন্য কর্মকর্তাদের দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন বলে জানান ওয়াহিদ।
নাশিদের দল মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি) সদস্যরা গত মঙ্গলবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্টের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘একে আপনার যা ইচ্ছা বলতে পারেন। কিন্তু যখন কেউ আকারে-ইঙ্গিতে বা বাস্তবেই আপনার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে আপনাকে পদত্যাগ করতে বলে তাহলে এটাকে আমি অভ্যুত্থানই বলব। ’
এদিকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ নাসিমের দাবি, এসব ঘটনার পেছনে ইসলামপন্থীদের হাত আছে।
বিলাসবহুল অবকাশ যাপন কেন্দ্র হিসেবে তিন লাখ ৩০ হাজার সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত মালদ্বীপের কদর বিশ্বব্যাপী।
তবে স্পা সেন্টারগুলো এবং সমুদ্র সৈকতে অশ্লীলতার অভিযোগ করে ইসলামপন্থীরা। তাদের আপত্তির মুখে ইতোমধ্যে কয়েকটি স্পা কেন্দ্র বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১২