আমেরিকার নর্দান কমান্ডের মতে, উচ্চ প্রযুক্তি ক্রুজ মিসাইল এবং সাবমেরিন সক্ষমতার কারণে রাশিয়াই হচ্ছে আমেরিকার জন্য বড় হুমকি।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন এয়ারফোর্স জেনারেল ভ্যানহের্ক বলেন, রাশিয়ার হাতে বর্তমানে এমন প্রযুক্তি রয়েছে ২০ বছর আগেও যার অস্তিত্ব ছিল না।
সেন্টার ফর স্ট্রেটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাডিসের একটি অনলাইন ফোরামে ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক মিসাইলের গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে ভ্যানহের্ক বলেন, ক্রুজ মিসাইল বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে লঞ্চ করা যায়। আকাশ থেকে, যুদ্ধজাহাজ থেকে, সাবমেরিন থেকে এমনকি বাণিজ্যিক কন্টেইনারবাহী জাহাজ থেকেও ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা যায়।
তিনি বলেন, রাশিয়ার ভেতর থেকে নিক্ষেপিত ক্রুজ মিসাইল আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে আঘাত করার সক্ষমতা রয়েছে। মিসাইল সক্ষমতা সঙ্গে সাইবার এবং মহাকাশ বিজ্ঞানে রুশদের বিনিয়োগ তাদের মিলিটারি এবং পলিটিক্যাল সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
ক্রেমলিনের উদ্দেশ্য হলো (যুদ্ধ ক্ষেত্রে) তাদের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, আমাদের পরিকল্পনা ধ্বংস করা এবং আমাদের অগ্রযাত্রাকে বিলম্বিত অথবা বাধাগ্রস্ত করা। সামরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার এই অগ্রগতি শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ নয়। আটলান্টিক এবং প্যাসিফিক উপকূলে তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে মহড়া চালিয়েছে। আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা অঞ্চলে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে সর্বোচ্চ।
ভ্যানহের্ক বলেন, ২০২০ সালের গ্রীষ্মে রাশিয়ান প্যাসিফিক ফ্লিটের একটি অংশ আলাস্কার ইকোনোমিক এক্সক্লুশন জোনের কাছাকাছি চলে আসে। এই সময় রাশিয়ার একটি সাবমেরিন কয়েকটি মাছ ধরার জাহাজের মাঝখানে ভেসে উঠে এবং মিসাইল ফায়ার করে। আমরা মনে করি, আর্টিকে রাশিয়া নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য এমনটি করেছিল। গত মে মাসে রাশিয়া আর্টিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যানশিপ নিয়েছে। রাশিয়ার জিডিপির ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আসে আর্টিক থেকে। তাই তারা ওই অঞ্চলটিতে একটি প্রভাবক শক্তি হয়ে উঠতে চায়। এই লক্ষ্যে তাদের মিলিটারিতে আধুনিকায়ন করেছে তারা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে নর্দান সি রুট এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ হয়ে উঠছে। এই অঞ্চলটি রাশিয়া নিজেদের বলে দাবি করছে। রাশিয়া হয়তো এই রুটে চলাচলকারী তাদের বাণিজ্যিক জাহাজে মিলিটারি মোতায়ন করতে চাইবে যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি স্বীকার করেন আগামী এক দশকের মধ্যে চীনও সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার মতো সক্ষম হয়ে উঠবে। অপরদিকে, কেএন-২৮ মিসাইলের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াও তার রেঞ্জ বাড়িয়েছে।
ভ্যানহের্কের মতে, আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের হুমকি ছাড়াও আমেরিকা প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি উপকূলে স্থায়ী ও নিকটবর্তী হুমকির মুখোমুখি। এই হুমকি মোকাবিলায় দরকার নতুন প্রজন্মের ইন্টারসেপ্টর, যা শুধু বোম্বারকেই শনাক্ত করবে না ছোট ক্রুজ মিসাইল শনাক্তেও সক্ষম হবে।
উপরোক্ত হুমকি মোকাবিলায় নর্থকম আর অল ডোমেইন কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলের বিভিন্ন প্রযুক্তি সক্ষমতা আলোচনা করেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রাডার প্রযুক্তি যেমন- ওভার দ্য হরাইজন রাডার, গ্লোবাল অল ডোমেইন সেন্সর ইত্যাদি প্রযুক্তি সমন্বয় নিয়ে কাজ করে থাকে। এসব প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াবে বলে তার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২১
এমএম/এনটি