ঢাকা: এ এমন এক শহর যেখানে ওলি-গলি, ছোট-বড় রাস্তা বলে কিছুই নেই। একটাই পথ তা হলো রানওয়ে।
সরকারি নথিতে অবশ্য ক্যামেরন পার্ক শহর নয়। আদতে একটি ফ্লাই ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি। এই ধরনের কমিউনিটি মূলত বিমানপোতেই গড়ে ওঠে।
শহরকে দু’ভাগে ভাগ করে সেই রানওয়ে এসে মিশেছে যে রাস্তায় সেই পথটিও ১০০ ফুট প্রশস্ত। প্লেন অনায়াসে ওঠানামা করতে পারে সেখানেও। এমনকি ব্যস্ত রাস্তায় চলন্ত গাড়িকে পাশ কাটিয়ে এগিয়েও যেতে পারে বিনা বাধায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার বহু বিমানপোত অকেজো হয়ে পড়েছিল। একইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকের সংখ্যাও বাড়ছিল। সংখ্যাটি ১৯৩৯ সালে ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ১৯৪৬-এ চার লক্ষে গিয়ে ঠেকে।
যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেই অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকদের আরামের অবসর দিতেই ফ্লাই ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমেরিকার অসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন অকেজো বিমানপোতগুলিতেই অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। চেনা পরিচিত পরিবেশে থাকতে বিমানচালকদের ভাল লাগবে, এই ধারণা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
১৯৬৩ সালে সেই ভাবনা থেকেই তৈরি ক্যামেরন পার্ক। এক সময়ে নাম ছিল ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্ট। সেই নাম বদলে হয় ক্যামেরন পার্ক এয়ারপার্ক। শহরের প্রতিটি পরিবারেরই কোনো না কোনো সদস্য এক সময়ে বিমানচালক ছিলেন।
বিশ্বে এমন ফ্লাই-ইন-কমিউনিটি রয়েছে ৬৪০টি। তার মধ্যে ৬১০টিই আমেরিকায়। তবে বৈশিষ্ট্য ক্যামেরন পার্ক তার মধ্যে সবচেয়ে নিখুঁত বলে মনে করা হয়।
আর পাঁচটা শহরে বাস-ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়ি যে ভাবে চলে, এ শহরে প্লেনও চলে সেভাবে। গাড়ির গ্যারাজের মতোই প্লেন রাখার জায়গা বা হ্যাঙ্গার রয়েছে ঘরে ঘরে। রাস্তার পাশের সাইনবোর্ডগুলি অনেকটাই নিচু। প্লেনের ডানা লেগে নষ্ট না হয়ে যায়, সেজন্যই অতিরিক্ত সাবধানতা। এমনকি রাস্তার নামও ‘বোয়িং রোড’।
পুরনো আমলের ঐতিহ্যবাহী গাড়ির প্রদর্শনীর প্রচলন আছে বিশ্বের বহু শহরে। ক্যামেরন পার্কে গাড়ির পাশাপাশি প্লেনেরও প্রদর্শনী হয়। বছরে এক দিন রানওয়ে বরাবর সার দিয়ে দাঁড়ায় বিভিন্ন মডেলের বিমান। রানওয়ে ধরে একসঙ্গে সেই সব বিমানের উড়ান নেওয়ার দৃশ্যও দেখার মতো।
হাতে গোনা ১২৪টি বাড়ি রয়েছে এই শহরে। তার মধ্যে ২০টি বাড়ি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সেই সব বাড়ি স্বস্তায় বেচেও দিচ্ছেন মালিকরা। ফেব্রুয়ারি মাসেই এমন একটি বাড়ির বিজ্ঞাপন প্রকাশ্যে আসে। ইন্টারনেটে দেওয়া সেই বিজ্ঞাপনে প্লেনের হ্যাঙ্গারসহ সেই বাড়িটির দাম চাওয়া হয়েছিল মাত্র ৬ লাখ ৮৫ হাজার ডলার।
তবে ক্যামেরন পার্কের অধিকাংশ বাসিন্দা আরামেই আছেন। ছোট্ট ‘শহর’-এ সুবিধার কমতি নেই। স্কুল, বাজার, হাসপাতাল, এমনকি শপিং মলও রয়েছে। আর যদি কিছু না পাওয়া যায় তা হলেই বা চিন্তা কিসের। প্লেনে চড়ে কাছের শহরে চলে যাওয়া তো মিনিট কয়েকের মামলা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
এনটি