ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মানবদেহে বসলো শূকরের কিডনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
মানবদেহে বসলো শূকরের কিডনি

মানবদেহে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করে সাফল্য পেয়েছেন নিউইয়র্কের একদল চিকিৎসক। জীবন রক্ষায় মানুষের শরীরে প্রাণীর কিডনি প্রতিস্থাপন সফলতার মুখ দেখবে বলে গত কয়েক দশক ধরে চিকিৎসকরা প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

অবশেষে নিউইয়র্কের চিকিৎসকরা সেই প্রচেষ্টায় প্রথম সফলতা পেলেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শূকরের একটি জিন পাল্টে দিয়েছিলেন তারা। পরে পরিবর্তিত জিনে নতুন শূকরের জন্ম দিয়ে সেটি বড় করে তোলেন। এরপর সেই শূকরের কিডনি মানবদেহে প্রতিস্থাপন করে দেখতে পান সেটি স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছে।

মানবদেহে অঙ্গপ্রতঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘাটতি মেটাতে বহুকাল ধরে শূকরের অঙ্গ নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু শূকরের শরীরের কোষে বিশেষ এক ধরনের সুগার রয়েছে, যা মানবদেহের কাছে অচেনা এবং তাৎক্ষণিকভাবে মানবদেহ তা প্রত্যাখ্যান করে। এ কারণে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকরা জিন-সম্পাদনা করে শূকরের জন্ম দেন। জিন সম্পাদনা করে শূকরের শরীর থেকে সেই সুগার ফেলে দেওয়া হয়।

জটিল এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা নেই এমন এক নারীর শরীরের বাইরে এক জোড়া বড় রক্তনালীর সঙ্গে শূকরের কিডনি সংযুক্ত করেছিলেন। এরপর দু’দিন ধরে এই কিডনি প্রতিস্থাপন পর্যবেক্ষণ করেন। এতে দেখা যায়, মানুষের কিডনি মূত্র নিষ্কাষনসহ যে পরিমাণ বর্জ্য পরিশোধন করে, শূকরের কিডনিও একই কাজ করছে। এবং মানবদেহ তা প্রত্যাখ্যান করেনি। চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনি গ্রহীতার শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অস্বাভাবিক ছিল। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

ডা. রবার্ট মন্টগোমারি

এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথ হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনে চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে থাকা ডা. রবার্ট মন্টগোমারি বলেছেন, এটি পুরোপুরি স্বাভাবিক কাজ করেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মানবদেহে এটির প্রত্যাখ্যাত হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু সেটি হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু অ্যাডামস বলেন, এই গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। এটি রোগী, গবেষক এবং নিয়ন্ত্রকদের আশ্বস্ত করবে যে, আমরা সঠিক পথেই এগোচ্ছি।

এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথ হাসপাতালের গবেষকরা একজন মৃত নারীর দেহ ভেন্টিলেটরে রেখেছিলেন। ওই নারী তার অঙ্গ দান করার ইচ্ছের কথা  জানিয়েছিলেন। রাজি ছিল তার পরিবারও। কিন্তু তা দানের উপযোগী ছিল না। ডা. রবার্ট মন্টগোমারি বলেন, পরিবারটি মনে করেছিল এই উপহার থেকে হয়তো ভাল কিছুর সম্ভাবনা দেখা দেবে।

তিন বছর আগে মন্টগোমারি নিজেও অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছিলেন। হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত একজন দাতার কাছ থেকে হৃদযন্ত্র নিয়েছিলেন তিনি। নিউইয়র্কের এই চিকিৎসক বলেন, আমি সেই ব্যক্তিদের একজন ছিলাম, যারা আইসিইউতে শুয়ে অপেক্ষা করছিলেন। আমি জানতাম না, আদৌ কোনও অঙ্গ সময়মতো আসবে কি-না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি বায়োটেক কোম্পানি মানব দেহের অঙ্গের ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করার জন্য প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত শূকরের অঙ্গ তৈরির কাজ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। দেশটিতে গড়ে প্রত্যেকদিন কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা অন্তত ১২ জন মারা যান।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।