ঢাকা: ১৫শ’ বছর আগের হাতে লেখা বাইবেলের একটি কপি তুরস্কে পাওয়া গেছে। ওই বাইবেলে যিশুখ্রিস্ট ইসলামের নবী মোহাম্মদের (সঃ) পৃথিবীতে আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
প্রচলিত বাইবেলের সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক বাণী সম্বলিত বাইবেলটি নিয়ে ভ্যাটিকেন খুবই আগ্রহ দেখাচ্ছে। রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এই অতি প্রাচীন বাইবেলটি দেখতে চেয়েছেন।
অনেকে বলছে, এই বাইবেলটি যিশু বা কোরআনে বর্ণিত ঈসা (আঃ) এর ১২ জন সহচরের একজন বারনাবাসের লিখিত বাইবেল (গোস্পেল)। গত ১২ বছর ধরে তুরস্ক সরকার এটি গোপন রেখেছিল।
সোনার হরফে লেখা বাইবেলটি লেখা হয়েছে যিশুর মাতৃভাষা অ্যারামেইকে। বলা হচ্ছে, এতে ইসলামের নবী মোহাম্মদের (সঃ) পৃথিবীতে আগমনের আগাম বার্তা দেওয়া হয়েছে।
চামড়ায় মোড়ানো পশুর চামড়ায় লেখা বাইবেলটির প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় ২০০০ সালে। চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় তুর্কি পুলিশ এর সন্ধান পায়।
২০১০ সাল পর্যন্ত বাইবেলটি কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছিল। পরে এটি আঙ্কারার নৃতাত্ত্বিক (এথনোগ্রাফিক) জাদুঘরে দেওয়া হয়। খুব শিগগির এটি সাধারণের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে বলে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী এরতোগ্রুল গণি বলেছেন, এটা বাইবেলের একটি প্রামাণিক সংস্করণ হতে পারে। এতে বর্ণিত যিশু খ্রিস্টের ধ্যান ধারণা ইসলামের সঙ্গে মিলে যাওয়ার কারণে খ্রিস্টান চার্চ গোস্পেলটি অস্বীকার করে আসছিল।
তিনি আরো জানান, ভ্যাটিকেন এটি দেখতে চেয়েছে। চার্চের মতে এটি একটি বিতর্কিত সংস্করণ। মুসলিমরা দাবি করেন, বাইবেলের চারটি আদি গোস্পেল- মার্ক, ম্যাথু, লুক এবং জন এর সঙ্গে এই সংস্করণটি যুক্ত হয়ে পঞ্চম গোস্পেল হবে।
ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী এবং এই গোস্পেলের বর্ণনা মতে, যিশু একজন মানুষ ছিলেন, তিনি ইশ্বর নন।
এই গোস্পেলে খ্রিস্টান সমাজে বহুল প্রচলিত বিশ্বাস ‘পবিত্র এয়ী’ বা ‘হোলি ট্রিনিটি’ এবং যিশুর ক্রুশ বিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে অস্বীকার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এতে এই বিশ্বাসও রয়েছে যে, যিশু নবী মোহাম্মদের (সঃ) আগমন বার্তা দিয়েছিলেন।
এতে এমন একটি শ্লোক রয়েছে- যিশু তার এক অনুসারীকে বলেন, মসীহকে কী নামে ডাকা হবে? তার সম্মানিত নাম হবে মোহাম্মদ।
অন্য জায়গায় যিশু নিজেকে মসীহ দাবি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি (মোহাম্মদ) হবেন ইসমাইলি বংশের। আরবরা এই শব্দটি ব্যবহার করে।
তবে খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের অনেকে একে একটি ভুয়া বাইবেল বলে দাবি করছেন। তারা বলছেন, এটি বড়জোর ১৬ শতকের দিকে লেখা। প্রকৃতপক্ষে সর্বপ্রাচীন বাইবেল লেখা হয়েছে স্প্যানিশ এবং লাতিন ভাষায়।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সেন্ট বার্নাবাস প্রথম শতক পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তিনি যিশুর ১২ জন অনুচরের একজন।
যেহেতু সেন্ট বারনাবাসের জীবদ্দশা এবং বাইবেলটি লেখার মধ্যে ৫শ’ বছরের একটা ফারাক আছে সেহেতু তাতে যা দাবি করা হচ্ছে তা নেই।
তুরস্কের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক ওমর ফারুক হারমান বলেছেন, এখন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করা ছাড়া বিতর্কের অবসান ঘটবে না। স্ক্যান করলেই বোঝা যাবে এটি আসলে কতো পুরনো।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১২