ঢাকা, বুধবার, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

মহাকাশ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:০৭, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১২
মহাকাশ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন

ঢাকা: চীন মহাকাশ গবেষণার আড়ালে মহাকাশ যুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এল বারগেস। গত সপ্তাহে এই দাবির পক্ষে চীনের মহাকাশ যুদ্ধাস্ত্রের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি।

তাতে দেখিয়েছেন, চীনের স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাইবার যুদ্ধের সক্ষমতা কতোটা উন্নত।

মার্কিন সিনেট আর্মড সার্ভিস কমিটিতে তিনি দাবি করেছেন, বেইজিং স্যাটেলাইট ধ্বংসে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র, ইলেকট্রনিক জ্যামার এবং লেসার রশ্মির উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

আর মহাকাশ যুদ্ধাস্ত্রের এসব উন্নয়ন বেশিরভাগই করা হচ্ছে বেসামরিক মহাকাশ গবেষণার আড়ালে।

বারগেস বলেন, ‘দেশটির আপাত বেসামরিক মহাকাশ প্রকল্প মহাকাশে অন্য দেশের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিকল করে দেওয়া বা কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের প্রচলিত সামরিক সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে।

তিনি জানান, বর্তমানে চীন যোগাযোগ, জাহাজ পরিচালনা, প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান, আবহাওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি এবং শত্রুপক্ষের অবস্থান সনাক্ত করার কাজে স্যাটেলাইট প্রকল্প পরিচালনা করছে। এর মধ্যে তাদের মহাকাশে মানুষ পাঠানো এবং অনুসন্ধান প্রকল্পও রয়েছে।

এছাড়া, সরাসরি স্যাটেলাইট ধ্বংসে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের (এএসএটি) সফল পরীক্ষা চালিয়েছে চীন। তারা জ্যামারের প্রভুত উন্নতি সাধন করেছে এবং এএসএটি মিশনের জন্য সরাসরি শক্তি সংগ্রহে সক্ষম অস্ত্রেরও উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এএসএটি এর জন্য সবচে প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত স্যাটেলাইট সনাক্ত এবং চিহ্নিত করার ক্ষমতা বাড়িয়েছে চীন। সম্প্রতি মহাকাশে মানুষ পাঠানো, চাঁদে মহাকাশ যান পাঠানো এবং মহাশূন্যে কোনো কিছুর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করার প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সক্ষমতা বাড়াচ্ছে চীন।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় একটি আবহাওয়া উপগ্রহ ধ্বংস করতে সক্ষম হয় চীন।

চীনের এই সফল পরীক্ষা মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক প্রকার চ্যালেঞ্জ কারণ এর মাধ্যমে নতুন কৌশলগত সক্ষমতার প্রকাশ ঘটেছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, চীনের হাতে এরকম প্রায় ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। স্যাটেলাইটে হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতায় যেকোনো মুহূর্তে বিঘ্ন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে চীন।

বার্গেস সতর্কতার সঙ্গে জানান, চীনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিচালিত মহাকাশ এবং মহাকাশ বিরোধী সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, চীনের বেইদো জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) স্যাটেলাইট চলতি বছরেই স্থানীয়ভাবে এবং ২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহার উপযোগী হবে। এর মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি সামরিক কাজে একে ব্যবহার করা হতে পারে।

এই স্যাটেলাইটটি বিদেশি সেনাদের জন্য নিখুঁতভাবে নিশানা নির্ধারণের সক্ষমতা দেবে। আর এটি পৃথিবীতে এবং মহাকাশে দ্বন্দ্ব উসকে দেবে।

অবশ্য এই ধরনের বা এর চেয়েও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে রাশিয়া। তারা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ ভিত্তিক জাহাজ পরিচালনা, যোগাযোগ এবং গোয়েন্দা স্যাটেলাইটগুলো সম্পূর্ণ অকেজো করে দেওয়ার সামর্থ রাখে।

মার্কিন বিরোধী আরেক দেশ উত্তর কোরিয়ার হাতেও এ ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে। তারা সোভিয়েতের তৈরি ইলেকট্রনিক জ্যামার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ পরিচালনা ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে সক্ষম। এই জ্যামারগুলো উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন যানে স্থাপন করা রয়েছে। এগুলো সচল করলে প্রায় ৬২ মাইল দূর থেকে মার্কিন জিপিএস সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটাতে পারবে বলে জানান মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচারক বারগেস।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।