প্যারিস: ফ্রান্সে ইদানিং বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ায় প্যারিসে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে প্রবাসীরা। এছাড়া বাংলাদেশকে নিরাপদ দেশের তালিকায় অন্তভুক্ত করার কারণেও হয়রানির শিকার হচ্ছে তারা।
সম্প্রতি ফরাসি দৈনিব লা মঁদ ও ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
২০১০ সালের সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফ্রান্সে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় ১২২ শতাংশ বেড়েছে।
ফ্রান্সে বসবাসরত নিরীহ বাংলাদেশিরা মূলত রেস্তোরাঁয় কাজ করে অথবা রাস্তায় ফল ও শাকসবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
সম্প্রতি ফ্রান্সের সরকারের কাছে বহু বাংলাদেশি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন জানায়। তবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব আবেদনের অনেকই ভিত্তিহীন উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করে। তাদের মতে, এসব আশ্রয়প্রাথীদের বেশির ভাগই মূলত অর্থনৈতিক তাড়না থেকে ফ্রান্সে এসেছে।
অভিবাসন সংক্রান্ত ফরাসি সংস্থা ‘ফ্রেঞ্চ এজেন্সি ফর দি প্রটেকশন অব রিফিউজিস অ্যান্ড স্টেটলেস পারসনস (অফপ্রা)’ সম্প্রতি বাংলাদেশকে তাদের ‘নিরাপদ দেশ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
সাধারণত ফ্রান্সের তালিকায় থাকা নিরাপদ দেশগুলোর নাগরিকরা দেশটিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় আশ্রয়লাভের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। ফ্রান্স থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের আইনগতভাবে তেমন কিছুই করার থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের আপিল করারও সুযোগ সীমিত।
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের ‘নিরাপদ দেশে’র তালিকা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে ফেলার দাবিতে কয়েকশ বাংলাদেশি প্রবাসীরা প্যারিসে বিক্ষোভ করে। ‘নিরাপদ দেশ’ তালিকা থেকে সরিয়ে ফেললে তারা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাবে।
এই তালিকায় থাকার কারণে ফ্রান্সে বাংলাদেশিরা শরণার্থীরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও তারা জানান।
ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেশন এই প্রতিবাদ কর্মসুচির আয়োজন করে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম স্বাধীন নয়’ লেখা ব্যানার দেখা যায়।
প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক বাংলাদেশি নারী বলেন, ‘আমি ১০ নভেম্বর এখানে এসে পৌছাঁনোর পরপরই তারা আমার হাতের ছাপ নেয়। গত ২৬ জানুয়ারি আমি জানতে পারি আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ’
ফ্রান্সে তার কোনো আত্মীয়স্বজন নেই আবার তিনি বাংলাদেশ ফেরত যেতেও পারবেন না বলেন জানান।
২০১০ সালের নভেম্বরে ‘অফপ্রা’ বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় চাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। তারা এ সময় বাংলাদেশের বেশকিছু সমস্যাকে চিহ্নিত করে। এগুলোর মধ্যে দুর্নীতি, আইনপ্রয়োগে পক্ষপাতিত্ব এবং সমাজের সর্বস্তরে বিরাজ করার অসমতাকেই মূলত চিহ্নিত করা হয়।
অভিবাসন আইনের ওপর বিশেষজ্ঞ একজন ফরাসি আইনজীবী ব্যারিস্টার ক্লদিয়া মিওসগা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বেশির ভাগ আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনপত্রেই যে জিনিসটি উল্লেখ থাকে তা হলো কর্তৃপক্ষ তাদের অভিযোগ আমলে নেয় না। দেশটিতে শুধুমাত্র সরকারি দলের (বাংলাদেশের) সদস্যদের অভিযোগই আমলে নিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। ’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফেডারেশনের প্রধান আব্দুল মালেক ফরাজি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি অনুধাবন না করেই ফরাসি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে নিরাপদ রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১২