ঢাকা, শনিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গণতন্ত্র বনাম গণভোগান্তির রাজনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:২৭, মার্চ ৭, ২০১২
গণতন্ত্র বনাম গণভোগান্তির রাজনীতি

ঢাকা: গত ৫ মার্চ পাকিস্তানের রাজধানী করাচি প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিল। রাস্তাঘাটে উপচে পড়া ভিড়, তিলধারণের ঠাঁই নেই, অসম্ভব ট্র্যাফিকজ্যাম।

বাসস্টপেজগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো গাড়ি পাচ্ছে না ঘরমুখো মানুষেরা, সাধারণ মানুষের ভোগান্তির একশেষ। কারণটা কিন্তু খুব হাস্যকর; একজন গণতন্ত্রপন্থী নেতা সিনেট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন, প্রিয় নেতাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে সমর্থকদের উন্মাতাল বিজয় র‌্যালির কারণেই রাজধানী করাচির এই হাল।

এমন অবস্থা কিন্তু আইন-শৃঙ্খলার অনুপস্থিতি বা বিদ্যমান আইনের অযোগ্যতার কারণে হচ্ছে তা নয়। বাস্তব ঘটনা হলো- রাজনীতিকরাই রাস্তা অবরোধ করে, পরিবহন ব্যবস্থা অচল করে দেওয়ার এমন কর্মসূচির পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন। আর এ মনোভাব যে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলই পোষণ করছে তা নয়, সব রাজনৈতিক দলই যারা গণতন্ত্রের চর্চা করে বলে দাবি করে তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ জনগণকে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রদানের জন্য নানাভাবে প্ররোচিত করে থাকেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হলো, বেশির ভাগ মানুষই ভোট দিতে আগ্রহী নয়। সে যাইহোক, তাদেরই যুক্তি হলো, এসব গণতান্ত্রিক সমাবেশে সেইসব সাধারণ মানুষই অংশ নেয়। তাহলে প্রশ্ন হলো- এই সাধারণ মানুষেরাই কেন একজন যোগ্য ও আক্ষরিক অর্থেই ভাল মানুষকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে না?

আমাদের গণতান্ত্রিক নেতাদের সবার চরিত্র একই রকম। এমনকি যারা নতুন করে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজনীতির ময়দানে আসছেন তারাও জনগণকে একই পন্থায় ব্যবহার করছেন।

গুরুত্বপূর্ণ শহর ও নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন অচল করে দেওয়াটা নিজেদের সস্তা জনপ্রিয়তা প্রমাণের একটা সহজতম কৌশলে পরিণত হয়েছে।

ইদানীং কিছু গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের মধ্যে আবার আরেকটি অদ্ভূত কথা শুনা যাচ্ছে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ সরকার পদ্ধতি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) মডেলের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে, সেসময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না (ছিল খিলাফত ব্যবস্থা)। আর খলিফাদের দৃষ্টিভঙ্গিও কিন্তু গণতান্ত্রিক ছিল না। হযরত ওমর বলতেন, নীল নদের পারে কোনো কুকুরও যদি ক্ষুধায় মারা যায়, তার জন্য শাসক দায়ী থাকবে। - এটা হলো খিলাফতের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার প্রকাশ। কিন্তু তা হালের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং নেতৃত্বের সমরূপ নয়।

ওপরের কথাগুলো পাকিস্তানের ফ্রিলেন্স ভাষ্যকার এসএম ওয়াকাস ইসলামের। তিনি পেশায় প্রকৌশলী। নিজ দেশের চলমান ঘটনা নিয়ে তার মতামত, চিঠি এবং বিশ্লেষণ পাকিস্তান, সৌদি আরব, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন পত্রিকা, সাময়িকী ও ব্লগে নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

নিজদেশের নেতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিষয়ে ওয়াকাসের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে আমাদের দেশের হালে চর্চিত রাজনৈকি আচারের সাযুজ্য অনস্বীকার্য। পাকিস্তানের মতো গণতন্ত্রের নামে গণদুর্ভোগের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা বাংলাদেশ এবং ভারতের মতো দেশেও চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যেমন, নেতার সংবর্ধনার জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে তোরণ নির্মাণ, সাংসদ বা মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গ্রীষ্মের তীব্র রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা, রাজনৈতিক সমাবেশের নামে রাজধানী অচল করে দেওয়া, রাজপথ দিয়ে মন্ত্রীদের গাড়ি যাওয়ার কারণে অহেতুক লম্বা সময় ধরে যানবাহন আটকে রাখাসহ অদ্ভূত সব কারণে বা অকারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ানো- প্রায় সিদ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মতোই চর্চিত হচ্ছে।


বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, ০৭ মার্চ, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।