ঢাকা : কানাডার মন্ট্রিলভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান এসএনসি-ল্যাভালিন লিবিয়ায় কাজ পেতে গাদ্দাফি সরকারকে ঘুষ দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, প্রতিষ্ঠানটির খরচ হওয়া পাঁচ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের কোনো হিসাব না পাওয়ায় তা আরও জোরদার হয়েছে।
তবে সোমবার এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানায়, তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি পাঁচ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার কোথায় ব্যয় হয়েছে তার সঠিক খাত নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টি তারা পুলিশকে জানানোর পরিকল্পনা করছে। এই অর্থ ব্যয়ের জবাবদিহি করতে না পেরে ইতিমধ্যেই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদত্যাগ করেছেন।
তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, সিইও পিয়েরে দুহায়েম কোম্পানির আইনের বাইরে গিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় এজেন্টদের দেওয়ার জন্য অর্থের বরাদ্দ অনুমোদন দেন। আর এ কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।
তার সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে কোম্পানি আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানায়, এই অনুমোদন দেন দুহায়েম নিজের ক্ষমতাবলে। যদিও কোম্পানির চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
লিবিয়া ও তিউনিসিয়ায় এজেন্টদের সঠিক কোনো খাত উল্লেখ না করেই বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগে তিনি পদত্যাগ করেন।
কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান গোয়েন মরগান সোমবার এক সম্মেলনে বলেন, কোম্পানির বোর্ড বিশ্বাস করে না এই অর্থ কোনো ধরনের ঘুষ হিসেবে অথবা লিবিয়ার কোনো ক্ষতি করতে ব্যবহৃত হয়েছে। কোম্পানির তদন্তেই এটি প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে তিনি স্বীকার করেন যে তদন্তের পরেও ওই বরাদ্দ করা অর্থের সঠিক ব্যবহার ঠিক কিভাবে হয়েছে তা চিহ্নিত করতে পারেনি কোম্পানি। প্রজেক্ট এ ও বি-এর জন্য এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, কোম্পানি কেবল এটা জানত।
এদিকে তদন্তে দুহায়েমের সহযোগিতার ব্যাপারে কোম্পানি জানায়, দুহায়েম তদন্তের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত এই অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু জানাতে পারেননি।
বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, তিনি জানতেন কোম্পানির অভ্যন্তরে পরিচালিত এই তদন্ত হয়তো কোম্পানির সুনামহানি করতে পারে। কিন্তু তিনি কোম্পানির বিশাল কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে বিষয়টির গুরুত্ব মানুষকে জানানোর জন্য তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন। গত বছর এসএনসির বার্ষিক রাজস্ব ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সিম সিতচেভ বলেন, দুহায়েমের পদত্যাগই কোম্পানির সম্মানহানিকর কোনো ঘটনার বিরুদ্ধে বোর্ডের সুস্পষ্ট অবস্থানকে নির্দেশ করে। যদিও দুহায়েম তার চাকরি জীবনের বিগত ২৩ বছর ধরে এসএনসির মাইনিং ব্যবসাকে গড়ে তুলতে সহায়তা করেন।
এদিকে নতুন সিইও দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত কোম্পানির বোর্ড মেম্বার ইয়ান বোর্ন ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানানো হয়েছে। তিনি এসএনসি-ল্যাভালিনের পরিচালনা বোর্ডে আছেন ২০০৯ সাল থেকে।
কোম্পানি ফেব্রুয়ারি মাসে ওই সন্দেহজনক বরাদ্দের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে। প্রথমে তদন্ত করা হয় তিন কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের সন্দেহজনক একটি বরাদ্দের ব্যাপারে। কিন্তু কোম্পানি এখন জানায়, তারা সর্বমোট পাঁচ কোটি ৬০ লাখ ডলার বরাদ্দের ব্যাপারে তদন্ত চালাচ্ছেন।
কোম্পানির সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও তৎকালীন লিবিয়া ডিভিশনের কোম্পানির প্রধান রিয়াদ বেন আইসা নিখোঁজ হওয়া অর্থ ঘুষ পরিশোধের কাজে ব্যবহার করেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। বেন আইসা গত ফেব্রুয়ারিতে কোনো কারণ না দেখিয়েই কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করেন।
এদিকে, সোমবার বেন আইসার আইনী উপদেষ্টা দুহায়েমের পদত্যাগ সম্বন্ধে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
তবে এসএনসি-ল্যাভালিন দাবি করছে, অর্থ কোথায় গেছে তা জানা না সত্ত্বেও তারা আত্মবিশ্বাসী এই অর্থ লিবিয়ায় অবৈধ কোনো কাজে ব্যয় হয়নি। এর পাশাপাশি কোম্পানি এর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে সাবেক লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পর্কের বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছে বলে জানা যায়।
কানাডীয় পরামর্শক সিনথিয়া ভেনিয়ারের সঙ্গে কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা জানাজানি হয়ে গেলে সেই থেকে সংকটের শুরু। লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিবারের সদস্যদের মেক্সিকোয় অবৈধভাবে ঢোকানোর চেষ্টা করার দায়ে ভেনিয়ার গ্রেফতার হন।
সিবিসি নিউজের একটি অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভেনিয়ার এসএনসির লিবিয়াবিষয়ক পরামর্শক ছিলেন। এছাড়া ভেনিয়ারের আমন্ত্রণে কোম্পানির ফিনান্সিয়াল কন্ট্রোলার স্টিফেন রয় মেক্সিকো সফর করেন। একটি পানি পরিশোধন প্রকল্পের বিষয় নিয়ে সম্ভাব্য কাজের ব্যাপারে কথা বলতে তিনি মেক্সিকো সফর করেন বলে জানা যায়। অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, গাদ্দাফির পক্ষের এক ব্যক্তির সঙ্গেও রয়ের সাক্ষাৎ হয়। ভেনিয়ারের গ্রেফতারের সময় তার সঙ্গেই ছিলেন তিনি।
তবে এসএনসি-ল্যাভালিন বলছে, ভেনিয়ারের ব্যাপারে তারা কোনো দায়দায়িত্ব নেবে না। কারণ কোম্পানির অনুমোদন ছাড়াই কোম্পানির একজন কমর্কতা তাকে পরামর্শক হিসেবে ভাড়া করে। এমনকি এখন ওই কর্মকর্তাও কোম্পানির সঙ্গে ছিলেন না।
তারা আরো দাবি করে, লিবিয়ায় এসএনসির কার্যক্রমের ব্যাপারে অনৈতিক কোনো কিছু প্রমাণিত হয়নি এবং কোম্পানির কোনো নির্বাহী ও কর্মচারী কোনো ধরনের অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১২
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর/রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর