ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

অমুসলিম দেশে মুসলিম পরিচয় রক্ষার উপায়

আতাউর রহমান খসরু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
অমুসলিম দেশে মুসলিম পরিচয় রক্ষার উপায়

চাকরি, লেখাপড়া, যুদ্ধ-বিপর্যয় থেকে আত্মরক্ষা ও উন্নত জীবন লাভের আশায় মুসলিম দেশ থেকে বহু মুসলিম অমুসলিম দেশে পাড়ি জমায়। তাদের অনেকেই দীর্ঘ মেয়াদে অমুসলিম দেশে বসবাস করে।

আবার কেউ কেউ অমুসলিম দেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করে। অমুসলিম দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলো মুসলিম পরিচয় রক্ষা করা। বিশেষত অমুসলিম দেশে বসবাসকারী মুসলিম পরিবারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের সন্তানদের অনেকেই ইসলাম ও ইসলামী জীবনধারা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, মুসলিম পরিচয় ত্যাগ করছে। যা খুবই উদ্বেগজনক।

মুসলিম পরিচয় বহনের গুরুত্ব
একজন মুসলমানের জন্য মুসলিম পরিচয় বহন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে তা অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কোরো এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ কোরো না। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)
আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির জীবনই মুসলমানের জীবন। আর তা হলো জীবনের সর্বত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য। (মাআরেফুল কোরআন : ২/১১০)

পূর্ণ পরিচয় বহন করা আবশ্যক 
মুসলমানের জন্য আবশ্যক হলো পরিপূর্ণরূপে ইসলামকে ধারণ করা। আংশিক পরিচয় ধারণ এবং আংশিক ত্যাগ করা গ্রহণযোগ্য নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৮)
আয়াতের ব্যাখ্যায় মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘তোমরা একই ধর্মাচার মেনে চলো, পরিপূর্ণ ইসলাম মান্য কোরো এবং তার ওপর দৃঢ় থাকো। ’ (তাফসিরে কুরতুবি : ৩/৩৯২)

পরিবার রক্ষায় চাই বিশেষ পরিকল্পনা
অমুসলিম দেশের ইসলামবিমুখ সমাজে পরিবারের সদস্যদের দ্বিন ও ইসলাম রক্ষায় বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। যেমন পরিবারে দ্বিনচর্চার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, শিশুদের প্রয়োজনীয় দ্বিনি শিক্ষা নিশ্চিত করা, পরস্পরকে দ্বিন পালনে উত্সাহিত করা ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কোরো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহূদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতারা, যারা অমান্য করে না তা যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই তারা করে। ’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)

আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা আবশ্যক
ইসলাম মা-বাবা ও অভিভাবককে সন্তান-সন্তুতি ও অধীনদের দ্বিনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার গুরু দায়িত্ব দিয়েছে। কেউ যদি এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তবে পরকালে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক ফিতরতের (ইসলামের) ওপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার মা-বাবা তাঁকে ইহুদি, খ্রিস্টান ও অগ্নিউপাসকে পরিণত করে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩৮৫)

মুসলিম পরিচয় রক্ষার উপায়
কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে মুসলিম রক্ষার কয়েকটি উপায় বর্ণনা করা হলো। যার মূলকথা হলো, ইসলাম ও মুসলমানের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা অন্তরে ধারণ করা এবং হীনমন্যতার শিকার না হওয়া। যেমন—

১. ইসলামই আলো : সমগ্র পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য ইসলামই আলো। ইসলাম ছাড়া আলোকিত জীবনযাপন সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, এর (কোরআন) দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান। তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। ’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১৬)

২. ইসলামই পূর্ণাঙ্গ : পৃথিবীতে যত দ্বিন ও ধর্ম আছে তার মধ্যে আল্লাহ ইসলামকেই পূর্ণতা দান করেছেন। তাই ইসলামকেই ধারণ করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বিন মনোনীত করলাম। ’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩)

৩. মুসলমানই শ্রেষ্ঠ জাতি : মুমিন অন্তরে এই বিশ্বাস লালন করে যে, মুসলমানই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। তাই মুসলিম পরিচয় ধারণ করা লজ্জার নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সত্কাজের আদেশ দাও, অসত্কাজ থেকে নিষেধ কোরো এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করো। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

৪. আল্লাহর আনুগত্য সর্বত্র : মুমিন আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে ইসলামের পরিচয় ধারণ করে। আল্লাহর আনুগত্য দেশে ও প্রবাসে সর্বত্র আবশ্যক। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহ তাআলাকে ভয় কোরো, মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কোরো, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কোরো। ’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)

৫. দৃঢ়তাই সাফল্য : প্রতিকূল পরিবেশে ঈমান ও ইসলামকে আঁকড়ে ধরা এবং তার ওপর দৃঢ় থাকাই সাফল্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই কোরআন পথদেখায় সেই পথের দিকে যা সুদৃঢ় এবং সত্কর্মপরায়ণ মুমিনদের জন্য সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য আছে মহাপুরস্কার। ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৯)

৬. সুপথে চলার সুফল নিজের : সুপথে চলতে কষ্ট হলেও এর সুফল ব্যক্তি নিজেই ভোগ করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সত্পথ অনুসরণ করে, সে সত্পথ অনুসরণ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর কেউ ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করলে তুমি বোলো, আমি তো কেবল সতর্ককারীদের জন্য একজন। ’ (সুরা নামল, আয়াত : ৯২)

৭. পরকালই প্রকৃত ঠিকানা : মুমিনের প্রকৃত ঠিকানা পরকাল। তাই সে পার্থিব স্বার্থের জন্য পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও, অথচ আখেরাতই উত্কৃষ্টতর এবং স্থায়ী। ’ (সুরা আলা, আয়াত : ১৬-১৭)

পরিচয় ত্যাগের ক্ষতি
কোরআন ও হাদিসের একাধিক স্থানে মুসলিম পরিচয় ত্যাগ করার ব্যাপারে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)
অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘দাড়ি-চুলের শুভ্রতাকে পরিবর্তন কোরো, আর ইহুদিদের অনুকরণ কোরো না। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫০৭৩)

মনে রাখতে হবে, কোনো অমুসলিম ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলাম ও ইসলামের পরিচয় ত্যাগের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। কেননা তারা মুসলিমদের ঈমানহারা না করা পর্যন্ত সন্তুষ্ট হয় না। পবিত্র এই বাস্তবতায় তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ কতই না চমত্কার বলেছেন, ‘ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তোমরা প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করো। বোলো, আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২০)

আল্লাহ সবাইকে স্বদেশে ও প্রবাসে ঈমান-ইসলাম রক্ষা করে চলার তাওফিক দিন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়:  ১২৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।