ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

ইসলাম

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা ইমানের দাবি

শায়খ আহমাদুল্লাহ | সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন
আপডেট: ০৮:৩০, অক্টোবর ১০, ২০২৫
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা ইমানের দাবি শায়খ আহমাদুল্লাহ

জলেস্থলে আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, সবই পরিবেশের অংশ। পরিবেশ বাদ দিয়ে আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।

পরিবেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি।

পরিবেশের বিপর্যয় ঘটলে আমাদের জীবনও সংকটের ভিতর পড়ে। তাই পরিবেশ যেন ভালো থাকে, সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখা উচিত। দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের অবহেলা এবং অসচেতনার কারণে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, হুমকির মধ্যে পড়ছে। এর দায় আমাদের। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেছেন, মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে (সুরা রুম)।

রাস্তা আমাদের পরিবেশের অংশ। প্রতিদিনই আমাদের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। রাস্তা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও ইমানি কর্তব্য। রসুল (সা.) বলেছেন, ইমানের সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা (মুসলিম)।

আল্লাহর কালাম এবং রসুলের হাদিস যে চিরশাশ্বত, অপরিবর্তনীয় এবং আমাদের জন্য পরম উপকারী; উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে নাজিল হওয়া আয়াতে আল্লাহ বলেন, জলেস্থলে ছড়িয়ে পড়া বিপর্যয়ের দায় আমাদের। আবার রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলাকে রসুল (সা.) ইমানের শাখা হিসেবে চিত্রিত করলেন। অথচ এই আয়াত যখন নাজিল হয় এবং এই হাদিস যখন রসুল (সা.) বর্ণনা করেন, সে সময়ের পৃথিবীর পরিবেশ এতটা বিপর্যস্ত ছিল না, সে সময়ের মক্কা-মদিনার পথঘাটে এত নোংরা-আবর্জনাও ছিল না; তারপরও এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা প্রমাণ করে, ইসলাম চিরপ্রাসঙ্গিক, চিরকল্যাণকর এবং চিরকালীন ধর্ম। পৃথিবীর পথচলা যদি আরও ১০ হাজার বছর দীর্ঘ হয় এবং সেই সময়ে যদি নিত্যনতুন সংকট দেখা দেয়, তবে সেই সংকট থেকে উত্তরণের পথও কোরআন-হাদিসে পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ। এটাই ইসলামের অনন্যতা। একবার সাহাবিরা নবীজি (সা.)-এর কাছে রাস্তার হক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রসুল (সা.) বললেন, (রাস্তার হক হলো) দৃষ্টি নিচু রাখা, কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজে উৎসাহ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা (বোখারি)।

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা যদি ইমানের শাখা হয়, রাস্তার হক হয়, তাহলে কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা কী ধরনের কাজ হতে পারে একবার ভাবুন! আমরা রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু তো সরাই-ই না, উল্টো পানির বোতল, ডাবের খোসা, কলার ছিলকা, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি ফেলে পরিবেশ নষ্ট করি। এতে যে রাস্তার হক নষ্ট করা হয়, অন্যকে কষ্ট দেওয়া হয়, এটা আমরা উপলব্ধিও করতে পারি না।

আমরা অনুকরণপ্রিয় জাতি। তবে কল্যাণকর, দরকারি এবং ভালো বিষয়ের অনুকরণ করি না। আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খারাপ ও ক্ষতিকর বিষয়ের অনুকরণ করি। আমরা পশ্চিমা পৃথিবীর খারাপ দিক অর্জন করার জন্য প্রতিযোগিতা করি। অথচ তাদের যে ভালো দিক আছে, সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকি। পশ্চিমা পৃথিবীর রাস্তাঘাটের দিকে তাকান, রাস্তার পরিচ্ছন্নতায় আপনার প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। কিন্তু সেই পরিচ্ছন্নতার গুণটি অর্জন না করে আমরা রাস্তার নগ্নতা ও অশ্লীলতার অনুকরণ করি। এটা খুবই দুঃখজনক বাস্তবতা।

আমাদের এই ঢাকা শহর নিয়ে গর্ব করার মতো যেমন অনেক অর্জন আছে, তেমনই লজ্জারও অনেক রেকর্ড আছে। কোটি মানুষের এই শহর প্রায় সব সময়ই দূষণের দিক থেকে পৃথিবীর শীর্ষে অবস্থান করে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। আমরা হয়তো সবটা পরিবর্তন করতে পারব না, সেই সুযোগ বা ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু এই শহরের পথঘাট চাইলেই আমরা পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি। শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দায়িত্বশীল লোকবল আছে। এটা তাদের পেশাগত দায়িত্ব। কিন্তু সচেতন নাগরিক হিসেবে চারপাশকে সুন্দর রাখার জন্য আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। সেগুলো আমাদের নৈতিক ও ইমানি দায়িত্ব। আপনার সন্তান যদি দেখে, আপনি চিপসের প্যাকেট রাস্তায় ফেলেন না, বরং রাস্তায় পড়ে থাকা প্যাকেট কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলেন, তবে আপনার সন্তান রাস্তা দূষিত করার আগে একবার হলেও ভাববে। এই শিক্ষাটা আমাদের সন্তানদের দিতে হবে।

পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে মসজিদের ইমামদের কাজের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। প্রত্যেক মসজিদেই উদ্যমী, পরিশ্রমী, স্বপ্নবাজ তরুণ মুসল্লি থাকে। তারা মানুষের জন্য কিছু করতে চায়। ইমামগণ এই তরুণদের কাজে লাগাতে পারেন। সপ্তাহে একটা দিন তারা মসজিদের মহল্লায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন মহল্লার পরিবেশ সুন্দর থাকবে, পাশাপাশি সমাজের বুকে মসজিদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে। তাই আসুন, নিজেদের ভালো থাকার স্বার্থে, ইমানি দায়িত্ব থেকে আমরা আমাদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করি।

জুমার মিম্বর থেকে
গ্রন্থনা: সাব্বির জাদিদ

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।