সভ্য পৃথিবীতে মিথ্যা কেউ পছন্দ করেনা। হাল-জমানায় মিথ্যার ধরন ও উপকরণে এসেছে নানা পরিবর্তন।
আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী। ’ (আলে ইমরান, আয়াত : ৬১)
সবচেয়ে জঘন্যতম মিথ্যা হলো- আল্লাহ বা তার রাসূল (সা.)-এর নামে, হাদিসের নামে বা ধর্মের নামে মিথ্যা বলা। এরপর জঘন্যতম মিথ্যা হলো- মিথ্যার মাধ্যমে কোনো মানুষের অধিকার নষ্ট করা, সম্পদ দখল করা। মিথ্যা কথা বলে কিছু ক্রয়-বিক্রয় করা। বিভিন্ন হাদিসে এমন কাজের জন্য কঠিন অভিশাপ ও কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বর্জন করে, মশকরা বা কৌতুক করতেও মিথ্যা বলে না, তার জন্য জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ির জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। ’ –আবু দাউদ
মানুষ হিসেবে আমরা অনেক সময় কৌতুকচ্ছলে কিংবা মন ভুলানোর জন্য শিশুদের সাথে মিথ্যা বলি। অথচ এরূপ মিথ্যাও মিথ্যা এবং গোনাহের কাজ। শুধু তাই নয়, এরূপ মিথ্যার মাধ্যমে আমরা শিশুদেরকে মিথ্যায় অভ্যস্ত করে তুলি এবং মিথ্যার প্রতি তাদের ঘৃণা ও আপত্তি নষ্ট করে দিই।
কিশোর সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমির বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের বাড়িতে বসাছিলেন, এমতাবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বলেন, এসো তোমাকে একটি জিনিস দিব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি তাকে কি দিতে চাও? তিনি বলেন, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে- তবে তোমার নামে একটি মিথ্যার গোনাহ লেখা হতো। ’ –আবু দাউদ
মিথ্যার কারণে অন্তরে কপটতা সৃষ্টি হয়
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং পরিণামে তিনি তাদের অন্তরে নিফাক (দ্বিমুখিতা) রেখে দিলেন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তারা আল্লাহকে যে ওয়াদা দিয়েছে তা ভঙ্গ করার কারণে এবং তারা যে মিথ্যা বলেছিল তার কারণে। (সুরা তওবা, আয়অত : ৭৭)
মিথ্যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদিতা হচ্ছে শুভ কাজ।
আর শুভ কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর বান্দা যখন সত্য বলতে থাকে, একসময় আল্লাহর নিকট সে সত্যবাদী হিসেবে পরিগণিত হয়। আর মিথ্যা হচ্ছে পাপাচার, পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, বান্দা যখন মিথ্যা বলতে থাকে, আল্লাহর নিকট একসময় সে মিথ্যুক হিসেবে গণ্য হয়। (বুখারি, হাদিস নং: ৫৭৪৩; মুসলিম, হাদিস নং: ২৬০৭)
প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ শায়খ সানআনি বলেন, ‘হাদিসে এর প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, বান্দা সত্য বললে সত্যবাদিতা তার একটি আলামত হয়ে যায়। পক্ষান্তরে বান্দা মিথ্যা বললে মিথ্যা বলা তার অভ্যাস ও আলামতে পরিণত হয়। সত্যবাদিতা ব্যক্তিকে জান্নাতে নিয়ে যায় আর মিথ্যা ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। অধিকন্তু সত্যবাদীর কথার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে ও তা মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পায় আর মিথ্যুকদের কথার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে না এবং মানুষের নিকট তা গ্রহণযোগ্যতাও পায় না। ’ (সুবুলুস সালাম : ২/৬৮৭)
মিথ্যুকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়
ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, যেসব কারণে ফতোয়া, সাক্ষ্য ও বর্ণনা গ্রহণযোগ্যতা হারায়, তার মধ্যে মিথ্যা অন্যতম। মিথ্যা মানুষের মুখের কার্যকারিতাই নষ্ট করে দেয়। যেমনিভাবে অন্ধ ব্যক্তির চাঁদ দেখার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় এবং বধির ব্যক্তির শোনার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, মুখ একটি অঙ্গের ন্যায়, যখন তা মিথ্যা বলা আরম্ভ করবে তখন তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। বরং মানুষের ক্ষতির মূল কারণই হচ্ছে মিথ্যা জবান। (আলামুল মুয়াক্কিঈন : ১/৯৫)
মিথ্যার কারণে চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়
দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতেই চেহারা বিবর্ণ ও মলিন হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কেয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। ’ (জুমার, আয়াত : ৬০)
এসআই