ঢাকা, বুধবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৭

ইসলাম

আমল নয়; আল্লাহর রহমতই মুক্তির চাবিকাঠি

মুফতি সাইফুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১০, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫
আমল নয়; আল্লাহর রহমতই মুক্তির চাবিকাঠি পবিত্র কোরআন শরিফ

মানুষের অন্তরে প্রায়ই এক ধরনের ধারণা জন্ম নেয় যে আমি যদি নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, দান করি, তাহলেই জান্নাত আমার জন্য নিশ্চিত। আমলকে নির্ভরতার একমাত্র মূলধন ভেবে বসে থাকেন অনেকে।

অথচ মহানবী (সা.)-এর একটি হাদিস আমাদের সেই আত্মতুষ্টি ও অহংকার ভেঙে দিয়ে প্রকৃত সত্যকে স্পষ্ট করে তোলে।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,  ‘তোমাদের কারো আমলই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। ’ 
সাহাবারা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেও নয়? তিনি বললেন, ‘আমাকেও নয়, যদি না আল্লাহ তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছাদিত করেন। তোমরা অবশ্যই সঠিক পথে চলার চেষ্টা করবে। ’  (বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৩; মুসলিম, হাদিস : ২৮১৬)

আমলের সীমাবদ্ধতা
এ হাদিসের মর্মার্থ হচ্ছে, মানুষ যত আমলই করুক, আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের তুলনায় তা অতিক্ষুদ্র। চোখের দৃষ্টি, কান, সুস্থতা, বাতাস, পানি- প্রতিটি নিয়ামতই আমাদের সামান্যতম আমলের চেয়ে অনেক বড়।

তাই শুধু আমলের বিনিময়ে জান্নাত পাওয়া সম্ভব নয়। জান্নাত হলো আল্লাহর একান্ত দয়া ও করুণার ফল।  

আমলের প্রয়োজনীয়তা
তাহলে কি আমলের কোনো মূল্য নেই? অবশ্যই আছে। আমল হলো সেই সেতু, যার ওপর দিয়ে আল্লাহর দয়ার নদী প্রবাহিত হয়।

নামাজ, রোজা, দান-সাদাকাহ, সৎকর্ম— এসবই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায়। আমল ছাড়া দয়া প্রার্থনা করা বৃথা, যেমন বীজ বপন না করে ফসল ফলার আশা করা। আমলের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলেই রহমত ও দয়া আশা করা যায়। আমলহীন জীবনে দয়াময় আল্লাহ দুনিয়াতে সুখ-শান্তি ও  আভিজাত্য ভোগ করার সুযোগ দিলেও চূড়ান্ত মুক্তির বেলায় রহমত ও দয়ার্দ্র আচরণ আশা করা বোকামি বৈ কিছু নয়। রাসুল (সা.) স্বয়ং প্রচুর ইবাদত করেছেন, রাতভর নামাজ পড়েছেন, অশ্রুসিক্ত দোয়া করেছেন—যেন আল্লাহর রহমত অর্জিত হয়।

অহংকার ভাঙার শিক্ষা
এই হাদিস মানুষকে বিনয় শিখায়। কেউ যেন মনে না করে—‘আমি তো ইবাদত করি, নিশ্চয়ই জান্নাত আমার। ’ বরং তাকে সর্বদা ভীত-আশাবাদী থাকতে হবে। এমনকি প্রিয় নবী (সা.)-ও বলেছেন, ‘আমাকেও নয় (আমলের কারণে জান্নাত নয়), তবে আল্লাহর রহমতে। ’ তাহলে অন্য মানুষের গর্ব করার অবকাশই কোথায়।

সঠিক পন্থা অবলম্বন
রাসুল (সা.) হাদিসের  শেষে বললেন, ‘তোমরা অবশ্য সঠিক পথে চলবে। ’ অর্থাৎ ইবাদত করতে হবে আন্তরিকভাবে, রিয়া বা অহংকার ছাড়া। আল্লাহর দয়ার প্রত্যাশা করতে হবে, তবে আমলও অব্যাহত রাখতে হবে। আমল হবে চেষ্টা, আর জান্নাত হবে আল্লাহর রহমতের ফল।

এই হাদিস আমাদের শেখায়- জান্নাত কেবল আমলের বিনিময়ে নয়, বরং আল্লাহর রহমতের কারণেই সম্ভব। তবে আল্লাহর সেই রহমতের যোগ্য হতে হলে আমল অপরিহার্য। আমাদের অবস্থান হওয়া উচিত এ রকম: আমল হবে আমাদের নিবেদন, আর আল্লাহর রহমত হবে মুক্তির আসল চাবিকাঠি।
তাই আমাদের সবার প্রার্থনা হওয়া উচিত- ‘হে আল্লাহ! আমাদের অল্প আমলকে আপনার অসীম রহমতের মাধ্যমে কবুল করুন এবং আপনার দয়া দ্বারা আমাদের মুক্তি দিন। ’ 

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।