ইসলাম শান্তির ধর্ম। এর মূল শিক্ষা সহনশীলতা, মানবতা ও ন্যায়বিচার।
মসজিদে অশোভন আচরণের ঘটনায় সহনশীলতার উদাহরণও রয়েছে নবীজির জীবনে। হাদিসটি বুখারি ও মুসলিম শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে। এক বেদুইন ব্যক্তি মসজিদে প্রস্রাব করতে বসলে সাহাবিরা তাকে বাধা দিতে যান। নবীজি বলেন, ‘তোমরা তাকে থামিও না, তাকে শেষ করতে দাও। পরে এর ওপর পানি ঢেলে পরিষ্কার করো। ’ এ থেকে বোঝা যায়, তিনি কঠোরতা নয় বরং দয়া ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে মানুষের ভুল সংশোধন করতেন। তায়েফে ধৈর্যের মহান দৃষ্টান্তের ঘটনা আমরা সবাই জানি। তায়েফের ময়দানে শিশুরা পর্যন্ত পাথর ছুড়ে নবীজিকে রক্তাক্ত করেছিল। তবু নবীজি বদদোয়া করেননি, বরং দোয়া করে বলে ছিলেন, ‘হে আল্লাহ, ওদের হেদায়েত দাও, তারা না জেনে না চিনে আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছে। ’ এ হাদিসটিও বুখারি ও মুসলিমে এসেছে।
মক্কায় কষ্টের মুহূর্তেও ধৈর্যের উদাহরণের ঘটনা এসেছে বুখারিতে। মক্কায় নবীজি (সা.) নামাজ আদায় করছিলেন। এমন সময় কাফেররা নবীজির পিঠে উটের নাড়িভুঁড়ি ফেলল, তখনো নবীজি হাসিমুখে ধৈর্য ধারণ করলেন, বদলা নিলেন না। ইসলামের মূলনীতি হলো সাম্য ও নিরাপত্তা। ইসলাম কখনো সহিংসতা বা অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে আক্রমণকে সমর্থন করে না। বরং ইসলাম প্রতিটি ধর্মাবলম্বীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলে। আল্লাহ বলেন, ‘দীনে জোর-জবরদস্তি নেই। ’ (সুরা বাকারা, ২৫৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেন ইনসাফ ও সদ্ব্যবহারের। ’ (সুরা আন-নাহল, ৯০)। রসুলের আদর্শকে সবচেয়ে উত্তমভাবে ধারণ করতে পেরেছিলেন তার সাহাবিরা। তাই সাহাবায়ে কেরামের জীবনীতেও রয়েছে এমন উদারতার অসংখ্য উদাহরণ। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) যখন বায়তুল মাকদিস বিজয় করেন, তখন তিনি গির্জার মধ্যে প্রবেশ করে নামাজ পড়া থেকে বিরত ছিলেন, যাতে ভবিষ্যতে মুসলমানরা গির্জাটিকে মসজিদে রূপান্তর না করে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি এমন শ্রদ্ধাশীল আচরণই শিক্ষা দেয়। অথচ বর্তমান বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে একটি নতুন ধরনের রাজনীতি গড়ে উঠেছে, যেখানে ইসলামকে ব্যবহার করা হয় রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য। নির্বাচনের সময় কিছু নেতা টুপি, দাড়ি, তসবিহ হাতে নিয়ে মসজিদ, মাদরাসা কিংবা পূজামণ্ডপে হাজির হন। কিন্তু তাদের আশপাশে থাকে দুর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু, সুদখোর, ধর্ষক, সন্ত্রাসী চক্র। এই দ্বিচারিতা সমাজে শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করে না, বরং সাধারণ মানুষের মাঝে ইসলামের প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের করণীয় হলো নবীজির আদর্শ অনুসরণ করা, সৎ ও আমানতদার নেতৃত্ব বেছে নেওয়া, ধর্মকে বৈষয়িক স্বার্থে ব্যবহার না করে, তা অনুসরণ করা। সব ধর্মাবলম্বীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অন্যায়কারীদের প্রশ্রয় না দিয়ে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।
আমরা যখন সত্যিকার মুসলমান হব, তখন মানুষ আমাদের দেখে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তখন আলাদা করে মঞ্চে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে না। সমাজে প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন ব্যক্তি চরিত্র ও নেতৃত্বে নীতি এবং আদর্শ থাকে।
ইসলাম শ্রেণি-বৈষম্য নয়, বরং সব মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার কথা বলে। নবীজির জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শেখায় কীভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়। আজ যখন সমাজে বিভ্রান্তি, সহিংসতা ও ধর্মীয় উগ্রতা বাড়ছে, তখন আমাদের উচিত হবে কেবল মুখে নয়, জীবনে নবীজির আদর্শ বাস্তবায়ন করা। নবীজি বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যার চরিত্র উত্তম। ’ (বুখারি)
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চরপাথালিয়া সালমান ফারসী (রা.) মাদরাসা, গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ