ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হিজরি সন এলো যেভাবে

মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
হিজরি সন এলো যেভাবে

শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা মুসলমানদের দিনপঞ্জি গণনার প্রারম্ভ হিসেবে নির্ধারিত হয় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর সময় থেকে। ইসলামি বিধি-বিধান প্রতিপালন ও পরিকল্পিত সন গণনার প্রয়োজনেই মূলত হিজরি সনের উদ্ভব।



এ ছাড়াও সরকারি অর্থব্যবস্থা পরিচালনা সুসংহতকরত নথিপত্র প্রস্তুত ও কর ধার্য করার পর আদায়ের তারিখ নির্দিষ্ট করা সম্পর্কে হজরত উমর (রা.) বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হন। উপরন্তু দলিলপত্রে তারিখ উল্লেখ না থাকায় নানা অসুবিধার সৃষ্টি হয়। আল বিরুনী কর্তৃক উদ্ধৃত একটি বিবরণীতে আছে, হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) হজরত উমর (রা.)-এর কাছে লিখিত এক পত্রে বলেন, ‘আপনি আমাদের নিকট চিঠিপত্র পাঠাচ্ছেন কিন্তু তাতে কোনো তারিখের উল্লেখ নেই। ’

খলিফা বিষয়টি অধীনস্থদের সঙ্গে আলাপ করেন এবং গ্রিস ও পারস্যে প্রচলিত পদ্ধতি পরীক্ষান্তে কাল গণনায় দিনপঞ্জি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। কেউ কেউ প্রস্তাব করেন যে, মহানবী (সা.)-এর জন্মদিন থেকে ওই তারিখ গণনা করা হোক, কিন্তু ওই তারিখ নিশ্চিত নয়।

তখন হজরত আলী (রা.) প্রস্তাব করেন যে, হিজরতকে দিনপঞ্জির প্রারম্ভ তারিখরূপে গ্রহণ করা হোক। কারণ বস্তুতপক্ষে ওই দিন থেকে মহানবী (সা.) শাসনক্ষমতা গ্রহণ করতে শুরু করেন এবং সেজন্য দিনটি চিরস্মরণীয়।

হিজরতের ১৬, ১৭ বা ১৮ বছর পর কিন্তু সাধারণ স্বীকৃত মতে ১৭ বছর পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই অব্দ নির্ধারণের আগে মুসলমানরা বিশেষ বিশেষ ঘটনার ভিত্তিতে বছরগুলোর নামকরণ করতেন। যথা- অনুমতির বছর, ভূমিকম্পের বছর, বিদায়ের বছর প্রভৃতি।

শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন, আরববাসী তখন ‘হস্তির বছর’ থেকে কাল গণনা করছিল।

হিজরতের বছরটি তৎপর হিজরি অব্দের প্রথম বছর নির্ধারিত হয়েছিল। মাসগুলো যেমন প্রচলিত ছিল তেমনি রইল এবং মহররমকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে ধরা হলো। সুতরাং হিজরি সনের শুরু ধরা হলো ঠিক হিজরতের দিন থেকে নয়, তৎপরিবর্তে এই বছরের ১ মহররম থেকে। প্রথম দিনটি ছিল শুক্রবার, মোতাবেক ১৬ জুলাই। ৯৩৩ সেলুকেসিয় বছর এবং জুলিয়ান দিনপঞ্জির ৬২২তম অব্দ।

হিজরি সন ইসলাম পুনর্জাগরণের প্রধান ও অবিসংবাদিত প্রতীক এবং মুসলমানদের বিজয় ও সাফল্যের এক জ্বলন্ত ইতিহাস। উজ্জ্বল অমর কীর্তি ও চিরন্তন ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যবাহী হিজরি সনের অনুসরণ করে গোটা ইসলামি জাহান মুসলিম উম্মাহর সঠিক ও শাশ্বত অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে মানজিলে মাকসুদের প্রতি এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পায়।



বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।