ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম একটি দিন

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম একটি দিন

শুক্রবারকে আরবিতে বলা হয় ‘ইয়াউমুল জুমুআ। ’ ‘জুমুআ’ অর্থ সমাবেশ কিংবা সপ্তাহ।

এদিনটি মুসলমানদের সমাবেশের দিন। সপ্তাহের এই একদিন মুসলমানরা মসজিদে সমবেত হয়। তাই একে ইয়াউমুল জুমুআ বলা হয়। বাংলায় জুমার দিন, জুম্মাবার কিংবা শুক্রবার। দিনটি স্বমহিমায় মহিমান্বিত, অনুপম মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এদিনটির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আছে আলাদা মর্যাদা এবং শ্রেষ্ঠত্ব। তাই এদিনটি সব সময়ই আলাদাভাবে গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়।

আল্লাহতায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল এবং গোটা জগতকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুমুআর দিন। এদিনেই আদি পিতা হজরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এদিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এদিনেই তাকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়। কেয়ামত এদিনেই সংঘটিত হবে। এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত আসে, তখন মানুষ যে দোয়াই করে, তা-ই কবুল হয়। -ইবনে কাসির

আল্লাহতায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ এবং ঈদের জন্য এদিনটি রেখেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইহুদিরা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের নির্ধারিত করে নেয়। খ্রিস্টানরা নির্ধারিত করে রোববারকে। আল্লাহতায়ালা শুধু এই উম্মতকে সুযোগ দিয়েছেন, তারা এই দিনকেই তাদের সমাবেশের দিন হিসেবে মনোনীত করে। -ইবনে কাসির

ইসলাম-পূর্বকালেও জুমুআর দিনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হতো। জুমুআর দিন সম্পর্কে হাদিসে এসেছে- ‘জুমার রাত হলো উজ্জ্বল রাত। আর জুমআর দিন প্রোজ্বল। -মিশকাত

অন্য আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘পাঁচটি এমন রাত আছে, যে রাতে দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। এক, জুমআর রাত। দুই. রজবের প্রথম রাত। তিন. শাবানের পনেরোতম রাত। চার. ঈদুল ফিতরের রাত। পাঁচ. ঈদুল আজহার রাত। -বায়হাকি

জুমার দিন অত্যন্ত মর্যাদাবান এবং ফজিলতের দিন। এদিন এক শ্রেষ্ঠ দিন। এদিনটি মুসলমাদের সমাবেশের দিন এবং ঈদের দিন। তাই এদিনে আমাদের আমল অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে করা দরকার। এদিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- এদিনে দোয়া কবুল হয়। দোয়াকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। সুতরাং এদিনে বেশি বেশি দোয়া করা চাই। জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে হাদিসে আছে, ‘হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই জুমার দিনে এমন মুহূর্ত আছে, কোনো মুসলমান যদি এর মধ্যে কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করবেন। -মিশকাত

হাদিসে বর্ণিত মুহূর্তটি কখন, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ হাদিসের মতানুসারে এ সময়টি হলো আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। কেউ কেউ বলেন, এটি ইমাম সাহেব যখন মিম্বারের ওপর বসেন খুতবার জন্য, তখন। কোনো কোনো বর্ণনামতে, দুই খুতবার মধ্যবর্তী সময়টুকুই এই মূল্যবান মুহূর্ত। তবে যা-ই হোক, জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ এক সময়, তাই এদিন দোয়া-আমল বেশি পরিমাণে করা একান্ত প্রয়োজন।

জুমার দিনে আরেকটি ফজিলত হলো, যদি কেউ এদিন মারা যায়, তবে সে কবরের আজাব থেকে মুক্তিলাভ করবে। এমন এক সুন্দর সুসংবাদ দিয়েছেন আমাদের নবীজি (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘যে মুসলমান জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে মারা যায়। আল্লাহতায়ালা তাকে কবরের আজাব থেকে নিরাপদ রাখেন। ’ -তিরমিজি

এভাবে বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্নভাবে মহানবী (সা.) জুমার দিনের বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা এবং ফজিলতের কথা বলেছেন। এদিন মারা গেলে কবরের আজাব থেকে নিরাপদ থাকার সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে প্রশ্ন জাগে- কবরের আজাব থেকে কী একদিনের জন্য নিরাপদ থাকা যায়? এদিনে তো মদ্যপ, ঘুষখোর সুদখোররা মারা যায়, তাদের কী হবে? কাফের-বেইমানরা যদি এদিন মৃত্যুবরণ করে, তবে কি তারা মাফ পাবে? কবরের আজাব কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে? সহজ জবাব, মুমিনদের জন্য কবরের আজাব কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমালাভ হয়। অবশ্য সুদখোর, ঘুষখোরদের হিসাব আলাদা, তাদের ব্যাপারে হাদিসের কথা এভাবে হতে পারে- অন্যান্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, যারা কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকবে, তারাই কেবল কবরের আজাব থেকে নিরাপদ থাকবে। দ্বিতীয়ত, কোনো কোনো গোনাহগার মানুষ ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বিনাহিসাবে জান্নাতে যাবে। যাদের ভাগ্যে এমন সৌভাগ্য হয়, কেবল তারাই এদিনে মারা যায়। তবে যা-ই হোক, জুমার দিন ক্ষমালাভের সুসংবাদ রয়েছে। তাই যারা এদিন মারা যায়, তারা বড়োই সৌভাগ্যবান।

অনন্য মর্যাদার অধিকারী এই দিনটি আমাদের পালিত হয় অত্যন্ত উদাসীনতা এবং চরম অবহেলার মাধ্যমে। আমাদের দেশে সাপ্তাহিক ছুটির দিন এটি। এদিন কাটে আরও ঝামেলার মধ্য দিয়ে। সরকারি চাকরিজীবীরা এদিন চরম ব্যস্ততার মাঝে কাটান। বেসরকারি চাকুরে যারা, তারা দিনটি কাটান ঘোরাফেরা আর বেড়ানোর মধ্যে। কিন্তু মানুষ তো এদিনেও নামাজ-কালামের কোনো ধার ধারে না। সমাজের তরুণ-যুবক যারা, তাদের অধিকাংশই নানা রকম খেলাধুলায় দিনটি পার করে দেয়- যা কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না।

আমাদের উচিত এদিনটি অত্যন্ত গুরুত্ব এবং মর্যাদার সঙ্গে অতিবাহিত করা। বিশেষ করে এই দিনের বেশ কয়েকটি আমল রয়েছে, যেগুলো খুবই সহজ এবং ফজিলতময়। আমরা যদি একটু যত্নের সঙ্গে এই আমলগুলো করতে পারি, তাহলে এদিনের ফায়দা এবং ফজিলত অর্জন করা আমাদের জন্য খুবই সহজ ও কল্যাণকর। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।



বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।