ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সন্ত্রাসীদের জন্য নির্ধারিত আল্লাহর অভিশাপ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
সন্ত্রাসীদের জন্য নির্ধারিত আল্লাহর অভিশাপ

সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাসেলস ও লাহোরের আত্মঘাতী বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। অনেকটা রুটিন করেই এভাবে প্রায় প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা হৃদয়ের গভীর থেকেই জানিয়ে আসছি।

সমূল বিনাশ কামনা করছি ওইসব ভ্রষ্টদের। নিকট অতীককালে বিভিন্ন দেশে এ ধরনের অাত্মঘাতী হামলা অনেকটা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

হামলার বিষয় যাই হোক, যারাই ঘটনা ঘটাক, যে দাবির পক্ষেই হোক- আত্মঘাতী হামলা বা এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা সমস্যা সমাধানের কোনো পথ হতে পারে না। এতে কেবল নিরীহ মানুষের মৃত্যুই হয়। অতীতের মতোই এবারকার হামলায় শিশু এবং নারীরাই বেশি নিহত ও আহত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি কী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছে তা বোধকরি কারো কাছেই পরিষ্কার নয়। কেবল নিন্দা কুড়ানো আর ধর্মকে কালিমালিপ্ত করা ছাড়া আর কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না।

আমরা মনে করি, এমন আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধ করতে সকল মহলেরই করণীয় রয়েছে। এটা সকলেরই মনে রাখা দরকার, হিংসা-বিদ্বেষ পরিস্থিতিকে ক্রমাগত অবনতিশীলই করে। রক্ত কেবল রক্তই বয়ে আনে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করে না। যারা মানুষ হত্যার পথে, অহেতুক রক্ত বইয়ে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে, সন্ত্রাস করে- সমস্যার সমাধান আশা করে, তারা ভ্রান্তপথে রয়েছে। তারা এ পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পথ বেছে নেবে, এটা আমরা প্রত্যাশা করি।

শুধু বর্হিবিশ্বে নয়- আজকাল আমাদের দেশেও অনেকেই সামান্য খুঁটিনাটি কারণে সন্ত্রাস, হত্যা, গুপ্ত হত্যাসহ খুনের পথ বেছে নিতে দ্বিধা করে না। এটা ইসলামের শিক্ষা নয়; ইসলামের শিক্ষা এর সম্পূর্ণ বিপরীত।

ইসলামে জীবন রক্ষার জন্য প্রাণবধের বিধান রয়েছে বটে; কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে হলে শরিয়া আইন অনুসরণ করতে হবে। ইসলামি আদালত বা খলিফা কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি বিচারের দায়িত্ব পালন করবেন। কেউ যদি এমন কোনো অপরাধও করেন যাতে তার প্রাণ নিধনের বিধান আছে; তবে তা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বাস্তবায়ন করা ইসলাম সম্মত নয়; বরং তা যথাযথ আদালত ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই কেবল বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখেন।

কারণ কোরআন-হা‍দিসে বর্ণিত বিধি-বিধান যা অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থাৎ ব্যক্তির একান্ত নিজের নয়; তথা সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তা কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায় নিজেদের মতো করে বাস্তবায়ন করা শরিয়ত সিদ্ধ নয়; এটি কেবলমাত্র আদালত ও সরকারের দায়িত্ব।

ইসলাম মতে মানব হত্যা মহাপাপ। এটি শিরকের পরেই ‘কবিরা গোনাহ’ বা সবচেয়ে বড় অপরাধ। ইসলামের কথা স্পষ্ট, নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা চরম অপরাধ। ইসলাম বলে দিয়েছে যে, কারণ ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে, সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করলো, আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো।

ইসলামের এমন নির্দেশনার পর ইসলামের দোহাই দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো দ্বিগুণ পাপ। এর মাধ্যমে সে ইসলামের নির্দেশ না মানার পাপ করছে, আর হত্যার অপরাধ তো রয়েছেই।

মানুষ হত্যাকারী রক্তপিপাসুদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন। মানব হত্যার পরকালীন বিধান সম্বন্ধে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো ঈমানদারকে হত্যা করবে,তার শাস্তি জাহান্নাম, সে চিরকাল সেখানেই থাকবে৷ আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন৷’ –সূরা আন নিসা : ৯৩

কোরআনে কারিমে আরও সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করবে না। ’ –সূরা আনআম : ১৫১

ইসলামি শরিয়তের প্রধান উদ্দেশ্য হলো- জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা, বংশ রক্ষা ও ধর্ম রক্ষা। এখানে প্রণিধানযোগ্য যে, শরিয়তের মূল পাঁচটি লক্ষ্যের শেষটি হলো ধর্ম রক্ষা এবং প্রথমটি হলো জীবন রক্ষা; কারণ প্রাণ না থাকলে ধর্ম অচল। সুতরাং ধর্মের নামে নিরপরাধ মানুষের হত্যা যে ভুল পদ্ধতি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা এ কাজ করে, তারা ইসলামের ধারক-বাহক তো নয়ই- তাদের সঙ্গে ইসলামের নূন্যতম সর্ম্পক রয়েছে এটাও বলা যাবে না। আর তাদের পক্ষাবলম্বন করার তো প্রশ্নই আসে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।