ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

৬০০ বছরেরও বেশি পুরনো কোরআনের কপি সংরক্ষিত যে পাহাড়ে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৬
৬০০ বছরেরও বেশি পুরনো কোরআনের কপি সংরক্ষিত যে পাহাড়ে

শুকনো বিস্কুট রঙের একটি পাহাড়। কিন্তু অন্যসব পাহাড় থেকে একটু আলাদা, একটু ভিন্ন।

হ্যাঁ, পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কোয়েটায় রয়েছে একটি পাহাড়। যে পাহাড়টি অপার্থিব ধনভাণ্ডারে পূর্ণ। বিষয়টি খোলাসা করেই বলা ভালো।

কোয়েটার ওই পাহাড়ের ছোট ছোট খোপগুলো দেখতে অনেকটা মৌচাকের মতো। এগুলো পরিপূর্ণ হয়ে আছে বাক্স ভর্তি কোরআনে কারিমের পুরনো পাণ্ডুলিপি দিয়ে। এখানে সারাদেশ থেকে পুরাতন ও ছিঁড়ে-ফাটা কোরআনের পাণ্ডুলিপি জমা নেওয়া হয়।

সেখান থেকে যেগুলো তুলনামূলকভাবে অক্ষত, কিংবা সংস্কার করলে পাঠের উপযোগী হবে- সেগুলো সেলাই ও বাঁধাই করে পাঠের উপযোগী করা হয়। অন্যগুলোকে অপবিত্রতা ও অমর্যাদা থেকে রক্ষা করতে সমাহিত করা হয়।

‘জাবালে নূর’ বা ‘আলোর পাহাড়’ নামে পরিচিত ওই পাহাড়টি দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন। স্থানীয় দুই ভাইয়ের চেষ্টায় জায়গাটি পবিত্র গ্রন্থের আবাসে পরিণত হয়। এর রক্ষণাবেক্ষণকারীরা জানান, এখানে এমন কিছু কোরআনের কপি রয়েছে যেগুলো ৬০০ বছরেরও বেশি পুরনো।

জাবালে নূরের পরিচালক হাজী মুজাফফর আলী বলেন, ‘আমরা কমপক্ষে ৫০ লাখেরও বেশি কোরআনের কপি এখানে সমাহিত করেছি। ’

কিন্তু পাহাড়ের নিচে থাকা টানেলগুলোর ধারণ ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে আসছে। পবিত্র গ্রন্থের শতশত বস্তাবন্দি কপিগুলোকে এখন পাহাড়ের গা ঘেঁষে শায়িত করে রাখা হয়েছে। এর কারণ রক্ষণাবেক্ষণকারীরা পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

মুসলমানরা খুব সম্মানের সঙ্গে কোরআনের পুরনো কপিগুলোর যবনিকাপাত করেন। ইসলামি স্কলাররা দু’ভাবে পুরনো কোরআন ধ্বংস করার অনুমতি দিয়েছেন। প্রথমত, কাপড়ের মধ্যে প্যাঁচিয়ে আগুনে পুড়ে ফেলা যা জাবালে নূরে করা হয়। দ্বিতীয়ত, কোনো প্রবাহমান পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া যাতে তার কালিগুলো এক পর্যায়ে পৃষ্ঠা থেকে ধুয়ে যায়।

কোয়েটা পর্বতকে কোরআনবেষ্টিত করার পেছনের মানুষটির নাম আবদুস সামাদ লাহিরি। এখন তার বয়স আশির কাছাকাছি। আগে ব্যবসা করতেন। এখন ছেলেদের কাছে ব্যবসা সমর্পণ করে পর্বতেই সময় কাটান বেশি।

তার কোরআন সংরক্ষণের এমন আগ্রহ জন্মায় ১৯৫৬ সালে। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তার বসবাসের বাসার চারপাশ ছিল ঔষধ এবং সংবাদপত্রে ঘেরা। তিনি একটি পত্রিকা নেন যেটাতে পবিত্র কাবাঘরের একটি ছবি ছিল, এটা তার এক বন্ধুর গাড়ির মেঝেতে পড়া অবস্থায় পেয়েছেন। তিনি সেটা তুলে নেন এবং তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করেন যে, আজীবন তিনি পবিত্র সব ছবি এবং বাণীর রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করে যাবেন।

১৯৯২ সালে আবদুস সামাদ লাহিরি ও তার ভাই আবদুর রশিদ কোয়েটার পাহাড়ি এলাকায় ইজারা নিয়ে পাথর ভাঙার ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু তারা দেখলেন ইজারাকৃত সম্পত্তির খুব অল্প জায়গাই ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হয়। তখন তিনি বলেন, ‘আমি এ পাহাড়টিকে কোরআনের পাণ্ডুলিপি সমাহিত করার কাজে ব্যবহার করবো। সেই সময় থেকে এখানে কোরআন সমাহিতের কাজ চলে আসছে।

কোয়েটার পর্বতের খাঁজে কোরআন সমাহিতের পাশাপাশি কিছু কোরআন কাঁচঘেরা বাক্সে ভরে রেখেও দেওয়া হয়েছে। যা দেখতে জাবালে নূরে মানুষের সমাগম দিনে দিনে বাড়ছে।

এই সুযোগে আগতদের অনেকেই নিজ নিজ বিশ্বাস থেকে টানেলের গায়ে বিভিন্ন রকম কথা খোদাই করে লিখে যান, যার বেশিরভাগই দোয়া-প্রার্থনার। একজনের আবেদন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে আমার পছন্দের কাউকে বিয়ে করার সুযোগ দাও!’

আরেকজনের আবেদন আবার খুবই নিদির্ষ্ট- ‘হে আল্লাহ! তুমি আমেনার বিয়ে ভেঙে দাও এবং হামজা থেকে তাকে উদ্ধার কর। ’

এভাবেই জাবালে নূর ধীরে ধীরে মানুষের পরিদর্শন ও প্রার্থনার স্থানে পরিণত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ নিশ্চিন্তে পুরনো কোরআন সমাহিত করার সুযোগ পাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।