ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হিজরি সনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগি

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৬
হিজরি সনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগি ছবি: সংগৃহীত

শেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে হিজরত অন্যতম একটি তাৎপর্যমণ্ডিত ঘটনা। হিজরত অর্থ- ত্যাগ করা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া।

মহান আল্লাহর নির্দেশে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবাদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান মক্কা নগরী ত্যাগ করে ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য মদিনায় চলে যাওয়ার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে হিজরত বলে গণ্য। যুগে যুগে নবী-রাসূলদের নিজ জন্মভূমি ত্যাগ করে অন্য স্থানে যেতে হয়েছে। কেননা নবী-রাসূলদের বিরোধিতা করা, তাদের অপবাদ দেওয়া, গালমন্দ করা, এমনকি হত্যা করা পৃথিবীর ইতিহাসের নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে নবী মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবাদের দেশত্যাগের মতো আত্মত্যাগের ঘটনাকে স্মরণ করে পরে হিজরি সালের গণনা শুরু হয়েছে।

নবী মুহাম্মদ (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়ত লাভ করেন এবং সেখানকার অধিবাসীদের মূর্তি পূজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য দাওয়াত দিতে থাকেন। তখন তার বিরুদ্ধে এক হয়ে যায় মক্কার কাফির-মুশরিকরা। তারা তাকে পথে-প্রান্তরে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে শুরু করে। তারা প্রিয় নবীকে পাগল, কবি, জাদুকর ইত্যাদি বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে। চলতে থাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

মক্কায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর নির্যাতনের বর্ণনা পাওয়া যায় হজরত আনাস (রা.)-এর বর্ণনায়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমাকে আল্লাহর পথে যেভাবে ভীত করা হয়েছে এমনটি আর কাউকে করা হয়নি। আমি আল্লাহর পথে যেভাবে নির্যাতিত হয়েছি, এমনটি আর কেউ হয়নি। মাসের ত্রিশ দিন ও রাত আমার ও আমার পরিবারের কোনো খাদ্য জোটেনি। বেলালের বগলে যতটুকু লুকানো সম্ভব ততটুকু ছাড়া। ’ –আহমাদ

হিজরতের ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কিভাবে অবিশ্বাসীরা রাসূল (সা.)-এর বিরুদ্ধে সব ধরনের নির্যাতন চালিয়ে তাকে তাওহিদের দাওয়াত থেকে বিরত করতে না পেরে হত্যা করার জন্য একতাবদ্ধ হয়েছিল। তারা বিভিন্ন গোত্র থেকে বাছাই করে সাহসী যুবকদের একত্রিত করেছিল। তারা রাসূলকে হত্যা করার জন্য বাড়ি ঘিরে ফেলে, কিন্তু আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে সে কথা জানিয়ে দিয়ে হিজরত করার নির্দেশ দেন। কাফের-মুশরিকদের এ ষড়যন্ত্রের কথা কোরআনে কারিমে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর কাফেররা যখন প্রতারণা করে আপনাকে বন্দি অথবা হত্যা করার উদ্দেশ্যে কিংবা আপনাকে বের করে দেয়ার জন্য তারা যেমন ছলনা করেছিল, আল্লাহও তাদের বিরুদ্ধে ছলনা করেন। বস্তুত আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম। ’ -সূরা আনফাল

মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের সব ষড়যন্ত্রকে ভেদ করে তার বন্ধু হজরত আবু বকরকে নিয়ে জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে মদিনার পথে যাত্রা করেন। হিজরতের সময় তারা সাওর নামক গুহায় আত্মগোপন করেছিলেন। পথে নানা বাধা-বিপত্তি পাড়ি দিয়ে মদিনায় (রাসূলের হিজরতের আগে এ শহরের নাম ছিল- ইয়াসরিব) পৌঁছান।

মদিনায় গিয়ে নবী (সা.) ‘মদিনা সনদের’ মাধ্যমে আউস ও খাজরাজসহ বিবদমান সব গোত্রকে একতাবদ্ধ করেন। মদিনায় সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, হত্যা, রাহাজানি নিষিদ্ধ করেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মদিনায় হিজরত করার মাধ্যমেই ইসলাম দ্রুত প্রসার লাভ করে। মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মুসলমানদের শক্তিমত্তা বাড়তে থাকে। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলাম বিজয়ী শক্তিতে পরিণত হয়ে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

নবী করিমকে (সা.) ওই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হন। হিজরতের গুরুত্ব বিবেচনা করেই ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সালের গোড়াপত্তন করেন। হিজরি সাল মুসলিম উম্মাহর আপন সাল। কেননা মুসলমানদের নব ইবাদত হিজরি সনের মাস দিন অনুযায়ী পালন করতে হয়। হিজরি সনের মাস ও দিনগুলো ইবাদতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওতোপ্রোতভাবে। আমাদের উপস্থিত আরেকটি নতুন হিজরি সাল। আগত ১৪৩৮ হিজরি সাল হোক আমাদের জীবনের জন্য বরকতময় ও কল্যাণকর। স্বাগতম নতুন হিজরি সাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।