ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কিয়ামতের দিন সাক্ষ্য দেবে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৬
কিয়ামতের দিন সাক্ষ্য দেবে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ছবি: সংগৃহীত

কোরআনে কারিমের সূরা নূরের ২৪ ও ২৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যেদিন তাদের জিহ্বা, হাত ও পা তাদের কৃতকর্মের কথা প্রকাশ করে দেবে। সেদিন আল্লাহ তাদের প্রাপ্য প্রতিফল পুরোপুরি দেবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য, স্পষ্ট প্রকাশক।

উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে শুধুমাত্র মুখ মানুষের গোনাহের সাক্ষ্য দেবে না, সেই সঙ্গে আল্লাহর অনুমতি নিয়ে প্রত্যেক অপরাধীর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও দুনিয়ায় তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে কথা বলতে থাকবে। তখন অপরাধীদের মনে হবে, তাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ তাদের কৃতকর্মকে রেকর্ড করে রেখেছিল- যা এখন আল্লাহর নির্দেশে ফাঁস করে দিচ্ছে।

মানুষের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার শরীরের সাক্ষ্য ও ভাষ্য অনুযায়ী সেদিন সঠিকভাবে প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা হবে। এই বিচার করতে গিয়ে আল্লাহ মানুষের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ অন্যায় আচরণ করা হবে না। তখন অপরাধীরা তাদের ভুল বুঝতে পারবে, তারা বুঝতে পারবে ভুল করে কতই না গোনাহ করেছে। যদিও সেদিন এ উপলব্ধি তাদের কোনো কাজে আসবে না।

সুতরাং দুনিয়ায় কিছু করার আগে মানুষের মনে কিয়ামতের দিনের কথা মনে রাখা দরকার। ওইদিন মানুষ নিজের হাতে আমলনামা দেখে এবং পাল্লা দিয়ে ওজন করার পরও অনেকে কৃতকর্ম অস্বীকার করে বসবে। তারা বলতে থাকবে- আমরা এই এই কাজ করিনি। ফেরশতারা কমবেশি বা ভুল করে লিখে রেখেছে। তখন আল্লাহতায়ালা তাদের মুখ বন্ধ করে দেবেন। তাদের ইচ্ছাধীন বাকশক্তির বদলে তাদের জিহ্বা, হাত এবং পা’কে কথা বলার শক্তি দিবেন। তখন জিহ্বা তার কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, হে আল্লাহ! সে আমার দ্বারা অমুককে গালি দিয়েছে, এই এই মিথ্যা বলেছে। এমনিভাবে হাত সাক্ষ্য দেবে- সে আমার দ্বারা অন্যায়ভাবে অমুকে প্রহার করেছে, আমার দ্বারা এই খারাপ কাজ করেছে। পা সাক্ষ্য দেবে- এ আমার দ্বারা এই এই খারাপ কাজ করেছে। এটাই কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে।

কোরআনে বর্ণিত এসব আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে এটা বুঝা যাচ্ছে যে, অপরাধীরা কিয়ামতের দিন আল্লাহর আজাব থেকে কোনোভাবেই রক্ষা পাবে না। এটা হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে পরকালে জবাবদিহির বিষয়ে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও (স্ব-স্থান হতে) নড়তে দেওয়া হবে না। ১. সে নিজের জীবনটা কোন পথে কাটিয়েছে? ২. যৌবনের শক্তি কোন কাজে লগিয়েছে? ৩. ধন সম্পদ কোন পথে উপার্জন করেছে? ৪. কোন পথে ধন সম্পদ ব্যয় করেছে? ও ৫. দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে যতটুকু জানত, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে কি-না? -তিরমিজি

বর্ণিত কোরআন-হাদিসের আলোচনায় এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, মানুষের গোটা জীবনের সব কার্যক্রম ইবাদতের অংশ। ইবাদত বলতে ব্যক্তি জীবনের নিছক কয়েকটি আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও প্রতিটি পর্যায়ে পূর্ণ মাত্রায় আল্লাহর আনুগত্যকে বুঝায়। অর্থাৎ মানুষকে এটা বুঝতে হবে যে, মসজিদে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া যেমন ইবাদত। তেমনি হাট-বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিক্ষাঙ্গনে, সংসদে, বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু প্রত্যেক স্থানে কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাও ইবাদত। এটার ভিন্ন কিছু ভাববার অবকাশ নেই। এর থেকে বিরত থাকারও সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।