ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ চরিত্র

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ চরিত্র সূরা তীনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে

মানুষ সামাজিক জীব। আর মানুষের সামাজিক পরিচয়টা গড়ে ওঠে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভর করে। মানবজীবনের সীমাহীন চাহিদা পূরণে অর্থের প্রয়োজনীয়তা সব থেকে বেশি। কিন্তু শুধুই অর্থ জীবনের প্রয়োজকে চাহিদা পূরণে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারে না। 

সামাজিক সম্পর্ক আর গ্রহণযোগ্যতাই জীবনের প্রয়োজন পূরণে মূল নির্ণায়ক উপাদান। আর মানুষের সামাজিক অবস্থানটা তৈরি হয় তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে।

অর্থবিত্ত জীবনের জৌলুসকে যতোটা না বৃদ্ধি করে; তার থেকে হাজারগুণ বৃদ্ধি করে জীবনের যন্ত্রণা আর হাহাকারকে। পক্ষান্তরে চারিত্রিক মধুময়তা অমৃততুল্য। যা জীবনকে অনাবিল শান্তির পথে পরিচালিত করে। সুতরাং বলা যায়, সৎচরিত্রই মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।  

হজরত উসামা ইবনে শারিক (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষকে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসূহের মধ্যে সর্বোত্তম কোনটি? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, উত্তম চরিত্র। -মুসনাদে আবু দাউদ: ১৩২৯

সৎ চরিত্র ঈমানকে পরিপূর্ণ আর অসৎ চরিত্র ঈমানকে ধ্বংস করে। মুমিন কখনও অসৎ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে না। অর্থাৎ অসৎ চরিত্রের অধিকারী পূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অসৎ চরিত্র ঈমানকে ওইভাবে নষ্ট করে যেভাবে মাকাল ফল খাদ্যদ্রব্য নষ্ট করে। -শোয়াবুল ঈমান: ৭৬৭২

অসৎ চরিত্র মানবজীবনের জন্য হরহামেশা বিপদের কারণ হয়ে দেখা দেয়। হজরত ওহাব (রহ.) একবার স্বীয় ভক্তবৃন্দের উদ্দেশ্যে নসিহত করতে গিয়ে বলেন, হে আদম সন্তানগণ! বিপদের সময় অবশ্যই ধৈর্যধারণ করবে। আর মানবজীবনের সব থেকে বড় বিপদ হলো- অসৎ চরিত্র। -হুল্লিয়্যাতুল আওলিয়া ওয়া ত্ববাকাতুল আসফিয়া: ৪/৩০

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এক হাদিসে ইরশাদ করেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, সৎ চরিত্র পাপকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয় যেভাবে পানি ময়লাকে মিটিয়ে দেয়। আর অসৎ চরিত্র আমলকে নষ্ট করে দেয়, এমনভাবে যেভাবে সিরকা বা ভিনেগার মধুকে নষ্ট করে। -আল মুজামুল আওসাত: ৮৫০

হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে পাঠানোর সময় ওসিয়ত করতে করতে শেষ ওসিয়ত হিসেবে বলেন, তুমি অবশ্যই তোমার চরিত্রকে সুন্দর করবে। কারণ মানুষের মধ্যে যার চরিত্র বেশি সুন্দর সে দ্বীনদারীর দিক থেকে তাদের মধ্যে উত্তম। -মুসনাদে আহমাদ: ২১৯৮৯

সৎ চরিত্র কিয়ামতের দিন নাজাতের কারণ হবে। কিয়ামতের দিন মানুষের আমলের ভিত্তিতে তার স্থায়ী পরিণতি জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। যার নেক আমলের পাল্লা ভারি হবে, সে হবে জান্নাতি। আর যার গোনাহের পাল্লা ভারি হবে, সে হবে জাহান্নামি।  

আল্লাহর দরবারে যখন বান্দার আমলের চূড়ান্ত হিসাব হবে, তখন নেকির পাল্লায় সৎ চরিত্রকে স্বতন্ত্র আমল হিসেবে ওজন করা হবে এবং সব থেকে ওজনদার আমল হিসেবে সেদিন সৎ চরিত্র মুমিনের মুক্তির কারণ হবে।  

হজরত উম্মে দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের আমল পরিমাপের পাল্লায় সৎ চরিত্রের ওজন সব থেকে বেশি হবে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীলভাষী-দুশ্চরিত্রকে অপছন্দ করেন। -জামে মামার: ২০১৫৭

লেখক: পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী  কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।