নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর ধ্যান ঠিক রেখে নামাজের ভেতরে নিজের মনকে নিমগ্ন রাখা শুরুতে কিছুটা কঠিন মনে হলেও চেষ্টা অব্যাহত রাখলে সহজ ও সম্ভব। এ জন্য কয়েকটি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
প্রথমেই আসে নামাজের প্রস্তুতির কথা। নামাজের বাহ্যিক প্রস্তুতির কথা আমরা সবাই জানি ও মানি। যেমন- পবিত্রতা অর্জন করা, সতর ঢাকা, কিবলামুখী হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু নামাজের জন্য বাহ্যিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে মানসিক প্রস্তুতিও নিতে হয়। নিজেকে প্রশ্ন করে, মনে মনে ভেবে নিজেকে নামাজের জন্য প্রস্তুত করতে হয়। নামাজে দাড়াঁনোর আগেই আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি করতে যাচ্ছেন। কেন করতে যাচ্ছেন। আপনি কার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী? তার ক্ষমতার পরিধি কত? এ নামাজ দ্বারা যদি আপনি তাকে সন্তুষ্ট করতে না পারেন তবে আপনার ক্ষতির পরিমাণ কত হবে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর মনে জাগ্রত রেখে মুখে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নামাজ শুরু করুন।
নামাজ শুরুর পর ভাবতে থাকুন, আপনি আল্লাহকে দেখতে না পেলেও তিনি কিন্তু সরাসরি আপনার নামাজ দেখছেন। আপনি তার সামনে আছেন। আরও ভাবুন, হতে পারে এটাই আপনার জীবনের শেষ নামাজ।
নামাজের প্রতিটি শব্দ খেয়াল করে উচ্চারণ করুন। যদি ইমামের পেছনে থাকেন তবে ইমামের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ খেয়াল করে শুনুন। যারা আরবি বুঝেন তারা অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিটি বাক্য, শব্দ উচ্চারণ করুন ও শুনুন। প্রতিটি শব্দের বক্তব্য সরাসরি বুঝার ও মন থেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। যারা আরবি বুঝেন না, তারা নামাজকে সুন্দর করার জন্য আরবি ভাষা শেখার চেষ্টা করুন।
আরবি ভাষা শেখার জন্য আপনাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে না এবং বেশি পরিশ্রমও করতে হবে না। একটা রুটিন করে নিন। নামাজে পঠিত আরবি বাক্যগুলোর কিছু কিছু প্রতিদিন অর্থসহ বুঝে শিখবেন। ধারাবাহিকভাবে এটা শুরু করুন। তাকবির, ছানা, সূরা ফাতিহাসহ কয়েকটি ছোট সূরা, তাশাহ্হুদ, দরুদ দোয়ায়ে মাছুরার প্রতিটি শব্দের অর্থ শিখুন। বাক্য পূর্ণ হলে বাক্যের অর্থ বুঝুন। প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে সময় ব্যয় করলে মাত্র এক বছরেই নামাজের পঠিত বাক্য ও শব্দগুলোর অর্থ আপনার জানা হয়ে যাবে। একজন শিক্ষিত মানুষের এ কাজটি খুব কঠিন কিছু নয়। শুধুমাত্র আপনার সদিচ্ছা ও আগ্রহই যথেষ্ট। অর্থের উপলব্ধি আপনার মনকে খুব সহজেই নামাজে নিমগ্ন রাখবে।
মনের ছুটাছুটি বন্ধ করার জন্য আপনি নিজেই আপনার মনকে শাস্তি দিন। এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার মনকে দু’ধরণের শাস্তি দিতে পারেন।
এক. আপনি মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন, মন যদি নামাজের বাইরে ছুটে যায় তবে মন ছুটে যাওয়া প্রতি রাকাতের জন্য এত টাকা করে দান করব। টাকার পরিমাণ এমন হতে হবে যা দান করা আপনার জন্য সম্ভব কিন্তু কষ্টকর অবশ্যই। যেন আপনার মন কষ্ট পায়।
দুই. মন ছুটে যাওয়া প্রতি রাকাতের জন্য চার রাকাত করে নফল নামাজ পড়বেন।
উপর্যুক্ত উপায়গুলো অবলম্বনের পাশাপাশি আপনাকে আরও একটি কাজ করতে হবে। সেটা হলো- আপনার নিকটতম পরহেজগার, সুন্নতের পাবন্দ, দুনিয়াবিমুখ কোনো আলেমের কাছে যাতায়াত করা ও তার সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করা।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
এমএইউ/