ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রমজানের শিক্ষার আলোকে চলতে হবে বাকি ১১ মাস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৭
রমজানের শিক্ষার আলোকে চলতে হবে বাকি ১১ মাস রমজানের শিক্ষার আলোকে চলতে হবে বাকি ১১ মাস

রমজান আসে, রমজান যায়, রেখে যায় রোজাদারের জন্য, মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য কিছু শিক্ষা। রমজানের সেই ‘শিক্ষার’ আলোকে রমজানের পাশাপাশি বাকি ১১ মাস জীবন-সংগ্রামে পাড়ি দেওয়ার আহ্বান জানায় মাহে রমজান।

রমজান পরবর্তী মাসগুলোতে রোজার আলোকে জীবন পরিচালনা করতে পারার মধ্যেই রয়েছে রোজাদারের সফলতা। ইসলাম ধর্মের প্রতিটি ইবাদত পালনের মধ্যে রয়েছে কিছু ‘অন্তর্নিহিত শিক্ষা।

’ ইবাদত অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি ইবাদতের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তদানুযায়ী জীবনযাপনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ইবাদত পালনের স্বার্থকতা। ইবাদতের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে আর জীবনযাপনে সচেষ্ট না হলে তা মেকি হতে বাধ্য।

আমরা এ প্রবন্ধে রমজান পরবর্তী ১১ মাস কাজে লাগানোর মতো কয়েকটি অনুপম শিক্ষার বিষয়ে নজর দেবো।

আত্মসংস্কার, আত্মসংশোধন আর আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে ঈমানদারকে, মুসলমানদের মুত্তাকি পরহেজগার বানানোর জন্যই আল্লাহতায়ালা রোজা ফরজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যে রূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার। ’ -সূরা বাকারা: ১৮৩

তাকওয়া কী? ইসলামের পরিভাষায় তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা ও সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। অন্য কথায়, আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলা এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। যারা আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলে তাদেরকে বলা হয় মুত্তাকি।

রোজাদার রোজা পরবর্তী সময়ে পাপমুক্ত জীবনযাপনে সচেষ্ট না হলে রোজা রাখা অর্থহীন। কেননা, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যার আমল বা বর্জনীয় কাজ পরিত্যাগ করল না, তার শুধু খাদ্য ও পানীয় ত্যাগ করার (রোজা রাখার) আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই। ’ –সহিহ বোখারি

এ ছাড়া আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে রোজা রাখার ব্যাপারেও হাদিসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন রোজাদার হিসেবে আসুন ব্যক্তি সংস্কার ও পরিবার সংস্কারের মাধ্যমে আমরা আমাদের রোজা-পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করি। রোজাদার হিসেবে এ কাজ রোজাদারের জন্য কঠিন নয়। রোজার মাসে আল্লাহর নির্দেশ পালন করেছি, রোজা-পরবর্তী মাসেও রোজাদারকে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে হবে- এটাতো স্বাভাবিক বিষয়।  

এক-দু’দিন নয়, মাসব্যাপী সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাদারকে পানাহারসহ কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়- আল্লাহর হুকুম পালনার্থে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের শিক্ষা। রোজাদারকে রোজার মাসের পাশাপাশি বছরের বাকি মাসগুলোতে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে রোজার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। অবৈধ, হারাম ও অনৈতিক উপার্জন থেকে রোজাদারকে বিরত থাকতে হবে। কারণ নামাজ ও রোজা যেমন ফরজ তেমনি হালাল পন্থায় উপার্জন করা এবং হালাল খাওয়াও ফরজ। সূরা বাকারার ১৬৮ আয়াতে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘হে মানুষ, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু আছে, তা থেকে তোমরা আহার করো আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ’

হালাল খাওয়া এমন এক গুরুত্বপূর্ণ আদেশ, এ আদেশ শুধু ঈমানদার নয়, নবী-রাসূলগণকেও একই আদেশ দেওয়া হয়েছিল। হালাল না খেলে ইবাদত কবুল হবে না, এ তো ইসলাম ধর্মের স্বীকৃত কথা।

কূট কৌশলের আশ্রয় নিয়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা লালিত-পালিত শরীরের কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না আর হারাম রুজি দ্বারা গঠিত শরীর জাহান্নামেরই উপযুক্ত। -সহিহ বোখারি

সুতরাং রমজানের শিক্ষা নিয়ে সর্বদা বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থে সংসার চালাতে হবে ও জীবন-যাপন করতে হবে।  

রোজার মাসে আল্লাহ রোজাদারকে কঠোর পরিশ্রমের বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন অতিরিক্ত ২০ রাকাত তারাবির নামাজের মাধ্যমে। পরিশ্রমের এ অভ্যস্ততা রোজাদারকে রোজা-পরবর্তী মাসগুলোতে বৈধ উপায়ে আরও উপার্জনের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে শেখায়, শেখায় চাকরির পাশাপাশি প্রয়োজনে পার্টটাইম কাজ করতে, পরিবার-পরিজনকে কর্মমুখি করতে, প্রয়োজনে হাঁস-মুরগি পালন করতে, মাছের চাষ করতে, সেলাইর কাজ করতে কর্মমুখি হতে।

রমজানের সঙ্গে কোরআনের আর কোরআনের সঙ্গে রমজানের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এ মাসে রাত জেগে নামাজে কোরআন শোনার গভীর আগ্রহ রোজাদারের মধ্যে সৃষ্টি হয়। তাইতো দিনভর রোজা রাখার পরও রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোরআন শুনতে রোজাদার ক্লান্তিবোধ করেন না। এতে রয়েছে রোজাদারের জন্য কোরআন বিষয়ক এক বাস্তব প্রশিক্ষণ।

এ প্রশিক্ষণের দাবি হচ্ছে, রোজার মাসের মতো রোজা-পরবর্তী মাসগুলোতে রোজাদারের জীবন কোরআনকেন্দ্রিক হওয়া। যারা এক সময় কোরআন শিখলেও পরবর্তীতে তা ভুলে গেছেন, তারা কেয়ামতে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন অঙ্গহীন অবস্থায়। এ হলো হাদিসের বর্ণনা। ঈমানদার-মুসলমান মুত্তাকি দাবিদার হওয়ার পরও যারা কোরআনকে ভুলে আছে, কোরআন শেখার, পড়ার, বোঝার ও মেনে চলার প্রয়োজন অনুভব করে না- তাদেরকে কিয়ামতে অন্ধ হিসেবে ওঠানোর জলদগম্ভীর ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ কোরআনে (সূরা ত্বহা-১২৪ থেকে ১২৬ আয়াত)।

কাজেই আসুন, দুনিয়ার সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য এবং পরলৌকিক মহাসফলতার জন্য রমজানের আলোকে আমরা আমাদের আত্মসংস্কার করি, আত্মসংশোধন আর আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে রমজান-পরবর্তী ১১ মাস জীবনযাপনে সচেষ্ট হই। এ ক্ষেত্রে ‘নিশ্চয়ই  আল্লাহ তোমাদের দিকে সদা জাগ্রত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ও সতর্ক পর্যবেক্ষণ করেন’ (সূরা আল ফজর ১৪ আয়াত) মনে রেখে জীবনযাপন করি। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।