কারও প্রতি মন আকৃষ্ট হলেই তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে- এমনটা ঠিক নয়। বরং প্রথমে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে ভালো লাগা বা তার প্রতি আকর্ষণের কারণ কিংবা উৎসটা কী এবং সে আদৌ বন্ধু হবার যোগ্য কি না ইত্যাদি।
হঠাৎ করে কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কোনোরকম বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে অনেক সময় দুঃখজনক পরিণতি ঘটতে পারে। অনেক ইন্টারনেট বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুব সহজেই অনুমান করা যায়।
ইসলাম এ সম্পর্কে কী বলে অর্থাৎ একজন ভালো বন্ধুর গুণাবলী কী ইসলামের দৃষ্টিতে সেদিকে নজর দেওয়া যাক।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই বুদ্ধি-বিবেককে কাজে লাগানো। এই বিবেকবান বন্ধু সদুপদেষ্টা হয় এবং তার ওপর সবসময় আস্থা রাখা যায়। কেননা এ ধরনের বন্ধু ভুলত্রুটি থেকে ফিরিয়ে রাখে। বিবেক-বুদ্ধিমান বন্ধুদের সঙ্গে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বহু বর্ণনা রয়েছে।
বিবেকবান বন্ধু মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং মানুষকে ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করে। পক্ষান্তরে অজ্ঞ এবং মূর্খ বন্ধু কারও কোনো উপকার তো করেই না বরং তার কথাবার্তা আর আচার-আচরণ অন্যদের বিরক্তি আর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নৈতিক উপযুক্ততা ভালো বন্ধুর অপর একটি গুণ। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ভালো বন্ধু সেই হতে পারে যে নৈতিক স্খলন থেকে দূরে থাকে। কেননা দুশ্চরিত্রবান আর মন্দ কাজে অভ্যস্ত বন্ধু শেষ পর্যন্ত মানুষকে অবৈধ, অশোভন আর অনৈতিক কাজের দিকে নিয়ে যায়।
যে বিচ্যুত এবং ফাসেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সে আসলে নিজের ওপর নিজেই জুলুম করে। কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হায় আমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিলো। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়। ’
কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে মনের অজান্তেই তার কথাবার্তা, আচার-আচরণ, কাজকর্মের প্রভাব পড়বেই। তাই ফলে বিচ্যুত ও অধমের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যাবে না।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর বৈশিষ্ট্যের আরও একটি দিক হচ্ছে- বন্ধুত্বের বন্ধন রক্ষা করা। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রক্ষা করে চলা আবশ্যক।
বন্ধুত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো- সততা রক্ষা করা। বন্ধুকে সম্মান করা বন্ধুত্বের নীতিমালার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। কারণ হলো- বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে যে বন্ধন তৈরি হয়, তার ফলে একজনের প্রতি আরেকজনের একটা অধিকার সৃষ্টি হয়, আর সেই অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অবশ্য কর্তব্য। সর্বোপরি একজন মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব হলো- অপরের সম্মান রক্ষা করা। চাই তা নীতিকৌশল পরিবর্তনের ব্যাপারেই হোক কিংবা ব্যক্তির আচার- আচরণে সংস্কার আনার ব্যাপারেই হোক, অবশ্যই সাহায্য করতে হবে।
বন্ধুত্বের নীতিমালার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার হচ্ছে- অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদে বন্ধুত্ব অটুট রাখা। লোকমান হাকিম বলেছেন, ‘প্রয়োজনের মুহূর্ত ছাড়া বন্ধুকে চেনা যায় না। ’
বন্ধুত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ব্যক্তিগত অহমিকা ও গর্ব পরিহার করা। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যখন গভীর হয় তখন এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কাছ থেকে কেবল যে সম্মানই পায় তা-ই নয় বরং নিজেকে কেউ বড় করে দেখার চেষ্টা করে না, অহংকার করে বেড়ায় না। পবিত্র কোরআনের সূরা জুমারের ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অহংকারীদের স্থান হচ্ছে দোজখ। ’
ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুদের সঙ্গে আচরণ হতে হবে সদয়, আন্তরিক এবং বিনয়ী। তবে গঠনমূলক সমালোচনাও বন্ধুত্বের মাঝে বিদ্যমান অনিবার্য একটি শিষ্টাচার। হাদিসে এসেছে, রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন, ‘এক মুমিন আরেক মুমিনের জন্যে আয়নার মতো। ’
তাই বন্ধুর দোষত্রুটিগুলো শোধরানোর ব্যাপারে সহযোগিতা করা শিষ্টাচারভুক্ত। কেননা এতে মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত। গঠনমূলকভাবে বন্ধুর দোষগুলো ধরে দিলে বন্ধু রাগ তো করবেই না বরং ভাববে সে তো পরম শুভাকাঙ্ক্ষী। তাই তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় ও গভীর হবে।
বন্ধুত্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনও ভুল করলে ক্ষমা চাওয়াটাও একটা শিষ্টাচার। কেননা ভুল স্বীকারের মধ্যেই রয়েছে সংশোধনের বীজ।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এমএইউ/