ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ডাক্তারদের কমিশন গ্রহণ প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
ডাক্তারদের কমিশন গ্রহণ প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান ডাক্তারদের কমিশন গ্রহণ প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

বেশ কিছুদিন জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বাস্ব্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন, ‘ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য বিষয়টি অনৈতিক ও পেশাগত বিধিমালা পরপন্থী। এই ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পেশাগত নীতিমালা রক্ষায় চিকিৎসক সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। এটি মোকাবিলার জন্য একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।’

সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১) এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী উপরোক্ত কথা বলেন।

আমরা জানি, মানব সেবা, শ্রদ্ধা ও অর্থবিত্তের সমন্বিত এক পেশাজীবীর নাম- চিকিৎসক।

অন্য যে কোনো পেশার তুলনায় এখানে মানব সেবার সুযোগ বেশি। তাই সমাজের মানুষ তাদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।  

কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এই শ্রদ্ধার জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে কিছু ফাঁক-ফোকর। তাই নানা সময়ে আলোচিত হচ্ছেন পেশাজীবী ডাক্তাররা। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এবং হাসপাতালের সঙ্গে কিছু চিকিৎসকের আর্থিক যোগসূত্রের অভিযোগ আছে। অর্থাৎ চিকিৎসক নির্দিষ্ট কোনো হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে হাসপাতাল হতে নির্ধারিত পরিমাণে কমিশন নিয়ে থাকেন। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখে ওই কোম্পানি থেকে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন।

কিন্তু এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে? এসবও অনেক চিকিৎসক গুরুত্ব দিয়ে জানতে চান এবং সেমতে জীবন পরিচালনা করেন। সব চিকিৎসক কিন্তু এক কাতারের নন।

কোনো রোগী ডাক্তারের কাছে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ব্যবস্থা পত্র আনতে গেলে ইসলামি আইনের পরিভাষায় রোগীকে বলা হবে মুস্তাজির- নিয়োগকর্তা। আর ডাক্তারকে বলা হবে আজির বা কর্মের বিনিময়ে অর্থ গ্রহীতা।

এক্ষেত্রে ইসলামের পরামর্শ হলো- রোগীর সার্বিক অবস্থাদি ডাক্তারকে জানানো এবং নির্ধারিত ভিজিট প্রদান করা। রোগী থেকে চিকিৎসা ফি নেওয়া বৈধ। আর ডাক্তারের দায়িত্ব হলো- রোগীর জন্য প্রযোজ্য চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা। রোগ শনাক্তের জন্য ডাক্তাররা রোগীর যে মেডিকেল টেস্টগুলো করিয়ে থাকেন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব (রোগ নির্ণয় করে প্রেসক্রিপশান দেওয়া) যথাযথভাবে আদায়ের সুবিধার্থে। এক্ষেত্রে কোন জায়গা থেকে পরীক্ষাগুলো করালে ভালো হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া ডাক্তারেরই পেশাগত দায়িত্ব। তিনি নির্ধারিত ভিজিটের বিনিময়ে এ কাজগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে করে দেবেন।

উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে একথা প্রমাণিত হয় যে, মেডিকেল টেস্টে রোগী প্রেরণকারী ডাক্তারের জন্য কমিশন গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। কারণ ডাক্তার আগেই প্রয়োজনীয় কাজের জন্য রোগীর কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন। তাই ল্যাব বা হাসপাতাল কর্তৃক ডাক্তারদের প্রদত্ত কমিশন শরিয়ত নিষিদ্ধ বিষয়, এটা উৎকোচের নামান্তর। -ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৩/৪১০, ফাতাওয়া রশিদিয়া: ৫৫৮

অনুরূপভাবে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি তাদের ওষুধ লেখার জন্য ডাক্তারদের যেসব দামি জিনিস, নগদ অর্থ ইত্যাদি দিয়ে থাকে, তাও শরিয়ত সম্মত নয়।

কারণ এটিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিনিময়হীন উৎকোচের শামিল। কেননা রোগীর জন্য কোন কোম্পানীর ওষুধ সর্বাধিক কার্যকরী তা লিখে দেওয়া চিকিৎসকের পেশাগত দায়িত্ব।  

ইসলাম মনে করে, আমানতদারী মানুষের অতি প্রশংসনীয় ও আদর্শ গুণাবলীর অন্যতম। আমানতের খেয়ানত করা মারাত্বক পাপ ও দোষণীয় স্বভাব। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমানতের খেয়ানত করাকে মুনাফেকির লক্ষণ বলে অভিহিত করেছেন।  

অন্য হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যার নিকট পরামর্শ চাওয়া হয়, সে আমানতদার। অর্থাৎ তাকে আমানতদার বিশ্বাস করেই তার নিকট পরামর্শ চাওয়া হয়।

বাস্তবতা হলো, একজন রোগী পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যায়। এ অবস্থায় ডাক্তাররা রোগীর এই আস্থাকে পুঁজি করে প্রতারণার আশ্রয় নিলে, তা হবে রোগীর সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। যা কবিরা গোনাহের শামিল।  

লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, ডাক্তাররা উন্নত মানসিকতার অধিকারী। সুতরাং জনগণের সেবায় উন্নত মানসিকতা নিয়ে কাজ করবে এটা ধর্মীয় ও মানবিকতার দাবী। যেন তাদের পেশায় কোনো ধরনের প্রতারণা ও ধোঁকার আশ্রয় না থাকে। কেননা যেকোনো বৈধ পেশা ধোঁকা ও খেয়ানতের কারণে নাজায়েয হয়ে যায়।

অবশ্য বিভিন্ন ছোটখাট স্টেশনারি সামগ্রী নেওয়া যেতে পারে। যেমন- কলম, প্যাড ইত্যাদি। এগুলোতে ঔষধ কোম্পানির ট্রেডমার্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের ট্রেড ন্যাম ছাপানো থাকে। মূলত এগুলো কোম্পানির বিজ্ঞাপনের কাজ দেয়। আর এগুলো বিক্রি করে টাকাও উপার্জন করা যাবে না। তাই এসব বিবেচনায় স্টেশনারি সামগ্রী গ্রহণ করা বৈধ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।