কিন্তু তুর্কি এই উদ্যোক্তা দ্রুত প্রমাণ করেন, তাদের সন্দেহ ভিত্তিহীন ছিল এবং পরবর্তীতে তিনি খুব শিগগিরই নতুন একটি অর্ডার দিতে ফিরে আসেন এবং প্রথমবারের মতো মুসলিম নারীদের জন্য শালীন পোশাক বিক্রি শুরু করেন।
তার ডিজাইনে শালীন পোশাক ‘মোদানিসা’ (Modanisa) বিক্রি কেনার জন্য করিম তুরের প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইটে বছরে ১০০ মিলিয়ন ভিজিটর ভিজিট করে থাকেন।
কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলেন, ‘মোদানিসা’র এখন প্রায় ৩শ’ সরবরাহকারী এবং ৩০ জন ডিজাইনার রয়েছে। এটি এখন বিশ্বজুড়ে শত শত সরবরাহকারীর জন্য একটি প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে; যারা আমাদের সাইটে তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়। ’
তবে, তুরের গল্প কেবল একটি কোম্পানি এবং তার নিজস্ব আর্থিক সাফল্যের গল্প নয়।
২০১১ সালে তুরে এই শালীন পোশাকের প্রবর্তন করেন। এটি প্রবর্তনে তার উদ্দেশ্য ছিলো- যেসব মুসলিম নারী ‘শালীন’ ইসলামি পোশাকে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে চান, তাদেরকে পছন্দমতো পোশাক বেছে নেওয়ার আরও সুযোগ করে দেওয়া।
মোদানিসা হচ্ছে বৈচিত্রময় এবং বিস্তৃত ‘হালাল’ সেক্টরের একটি ছোট্ট অংশমাত্র।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মধ্যে এর বিক্রি ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আরবি ভাষায় ‘হালাল’ অর্থ ‘অনুমোদনযোগ্য। ’ শব্দটি যে কোনো পণ্য বা পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, যা ইসলামি আইন ও সামাজিক নিয়ম লঙ্ঘন করে না।
হালাল শিল্পসমূহের মূল পার্থক্য হচ্ছে, এতে ইসলামিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন বিষয়ে এড়িয়ে চলা হয়। মুসলিম ভোক্তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর একটি সচেতন প্রচেষ্টা হিসেবে এটি করা হয়।
হালাল শব্দটির সঙ্গে জড়িত শিল্পগুলোর মধ্য ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ব্যাংকগুলো তাদের পরিষেবায় সুদকে এড়িয়ে চলে। হালাল খাতের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য প্রধান শিল্পগুলো হচ্ছে- খাদ্য, পোশাক এবং পর্যটন শিল্প।
হালাল পণ্য খোঁজা কিংবা হালাল পণ্যের চাহিদা বিশেষভাবে লক্ষণীয় পশ্চিমা দেশগুলোর মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে। যেমন, যুক্তরাজ্যে ‘কেএফসি’ এবং ‘সাবওয়ে’র মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডসমূহ হালাল মেনুর অফার করে থাকে।
এইচ এন্ড এম, মার্কস এবং স্পেন্সারের মতো পোশাকের দোকানগুলোতে মুসলিম নারীদের জন্য বিশেষ ধরনের হালালা পোশাক বিক্রি করা হয়। সুপারমার্কেটগুলোতে হালাল ফুড সেক্টর এবং মূলধারার ব্যাংকগুলো ইসলামিক ফাইন্যান্স পণ্য প্রস্তাব করে।
কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জামাল আহমেদ ব্যাখ্যা করেন, ‘হালাল’ পণ্য গ্রহণের বিষয়টি ইসলামিক রীতিনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘হালাল পণ্য গ্রহণ, হতে পারে তা খাদ্য, বস্ত্র, ভ্রমণ বা ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি মুসলমানদের তাদের পরিচয়ের একটি ধারণা দেয়। পাশাপশি স্থিতিশীলতা এবং চিন্তার স্বাধীনতার একটি ধারণাও প্রদান করে। ’
ভোক্তা পর্যায়ে এটিকে মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার পরিপূর্ণতা ও তাদের পরিচয়ের অংশ হিসেবে দেখে। অন্যদিকে সরকার এটিকে আর্থিক বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা হিসেবে দেখে থাকে।
জাপান ও তুরস্কের সাম্প্রতিক হালাল ব্যবসার প্রদর্শনী ওইসব দেশের সরকারের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে।
২০১৩ সালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন লন্ডনকে ‘ইসলামিক অর্থনীতির’ একটি বড় বাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং ইসলামিক আইন অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের প্রথম সরকারি বন্ডের বিষয়টি ঘোষণা করেন। প্রথম অসমুলিম রাষ্ট্র হিসেবে এটি ঘোষণা করা হয় শুধু হালাল চাহিদার প্রতি খেয়াল করে।
ব্রাজিলের মুসলমানরা দেশটির ২০৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। মুসলিমদের সংখ্যা ২ লাখের কিছু বেশি। তারপরেও দেশটি হালাল গরুর মাংসের একটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। ২০১৫ সালে দেশটি ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের হালাল পণ্য রপ্তানি করে।
একইভাবে নিউজিল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও দেশটি হালাল মাংসের অন্যতম একটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। তারা বছরে প্রায় ৫৭৬ মিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্য বিক্রয় করে থাকে।
-আল জাজিরা অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৭
এমএইউ/