স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র হামেস জিমেনেজ বলেন, ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলে গণনা শুরু হবে এবং শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।
ভোটগ্রহণ দু’টি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে গত বছরের জুলাইতে ‘বেসিক বাংসামরো ল’ নামে একটি আইনপত্রে স্বাক্ষর করে ঘোষণা করেছিলেন যে, নতুন স্বায়ত্বশাসিত এলাকা গঠনে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
বাংসামরো যেমন হবে
মিন্দানাওয়ে নতুন আইনটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের মুসলমানদের আইনি ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দ্বীপপুঞ্জে বিদ্যমান স্বশাসিত অন্যান অঞ্চলগুলোর চেয়েও উন্নত ও সুবিধা দিয়ে স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা করা হবে আশা করা যাচ্ছে। নতুন আইন অনুযায়ী বাংসামরোয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার গঠিত হলে ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তিতে শরিয়াসম্মত আদালতও গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার মিন্দানাওতে বাংসামরোর সরকারে কাছে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তবে বাংসামরোর পানিসম্পদ এবং জ্বালানি উৎস ব্যবস্থা যৌথ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অন্যদিকে আইন অনুসারে মরো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সাবেক যোদ্ধারা এবং মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (এমআইএলএফ)-এর সৈন্যরা সরকারি বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। এছাড়াও ফিলিপাইনের লানো দেল নর্তে প্রদেশের ৬টি পৌরসভা এবং কোতাবাতো প্রদেশের ৩৯টি পৌরসভা নতুন আইনে গণভোটের মাধ্যমে বাংসামরোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
২০১৪ সালে ফিলিপাইনের সাবেক স্বৈরশাসক তৃতীয় বেনিনো আকিনোর সময় ফিলিপাইন সরকার এবং মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির আওতায় বংসামরোর ‘মৌলিক আইন’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। মূলত এটির প্রেক্ষাপটে মিন্দানাওতে বাংসামরো স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হবে। মাগোইন্দানাও, লানো দেল সুর এবং সুলু অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বাংসামরোয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ।
বাংসামরোর কিছু কথা
স্বায়ত্বশাসিত মুসলিম এলাকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া স্বল্পপরিচিত মুসলিম জনপদ বাংসামরোকে সংক্ষেপে ‘মরো’ বলা হয়। জানা গেছে, ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এ জনপদের জনসংখ্যা ২ কোটি ৫৬ লাখ। এর ৯২ শতাংশই মুসলিম ধর্মাবলম্বী।

বাংসামরোর সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে। শতবছর ধরে মরোরা নির্যাতিত ও নিপীড়িত। স্প্যানিশ ও বৃটিশ উপনিবেশবাদের মাধ্যমে মরো মুসলিমরা নির্যাতিত হওয়ার পর গত ৫০ বছর ধরে ফিলিপাইন সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রাম-লড়াই করে গেছে। এ সংগ্রামযাত্রায় প্রায় লাখেরও অধিক মরো মুসলিম জীবন বিসর্জন দিয়েছে।
অবহেলার শিকার
ফিলিপাইন সরকারের মতো মুসলিমবিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোও মুসলিম অধ্যুষিত জনপদটির প্রতি গুরুত্ব দেয়নি। স্বাধীনতাকামী মরোদের দীর্ঘ সংগ্রামের পর নতুন আইন অনুযায়ী গণভোট গ্রহণ শেষে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংসামরো’ স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে।
বাংসামরো প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ। তবে অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল। কিন্তু নতুন এলাকা গঠিত হলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে বলে আশা মরোদের।
মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা ড. মুরাদ ইবরাহিম বাংসামরো সরকারের প্রধান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইতিহাসের আলোকে জানা যায়, মুরাদ ইবরাহিমের অব্যাহত সংগ্রাম ও দৃঢ় মনমানসিকতার দরুন বাংসামরোর জনগণ স্বায়ত্বশাসিত সরকার পেতে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বংসামরোতে একটি আদর্শ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠিত হলে পার্শ্ববর্তী দেশ ব্রুনাই দারুস সালাম, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও বাংসামরোকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেবে। পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস মরো নেতাদের।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
এমএমইউ/


