ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

প্রকৃতি-পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২১
প্রকৃতি-পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক

মানবসৃষ্টির আগেই মহান আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের আবাস হিসেবে মনোনীত করেন। এ হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার আগেই মানবজাতির সঙ্গে পৃথিবীর একটি সংযোগ স্থাপিত হয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বলেন, নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি পাঠাবো। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩০)

মুসলিম ঐতিহাসিকদের দাবি, মানুষ পাঠানোর আগে আল্লাহ পৃথিবীকে আবাসযোগ্য করে তোলেন। পৃথিবীতে বসবাসকারী অন্য জাতি-গোষ্ঠীকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে বিতাড়িত করা হয়। (আল-বিদায়া ওয়াল-নিহায়া: ১/১৭৮)

অন্যদিকে আল্লাহ মানবজাতিকে পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ আদমকে সব বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩১)

মুজাহিদ (রহ.) ওই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তাকে প্রতিটি প্রাণী ও পাখি এবং সব জীব ও জড় বস্তুর নাম শিক্ষা দেওয়া হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতর জীব। পৃথিবীর আলো-বাতাস, খাদ্য-পানীয়, আবহাওয়া থেকেই সে তার জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে। সুতরাং পৃথিবীর প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭০)

মানুষের জন্ম ও বিকাশে পরিবেশের ভূমিকা
কোরআনের আলোকে মানুষের শারীরিক ও মানসিক গঠন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে প্রাকৃতিক উপাদান ও পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। নিম্নে কোরআনের বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

১. শারীরিক বা জৈবিক গঠন: পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষও আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রাকৃতিক উপায়ে ও প্রাকৃতিক উপাদানে জন্মগ্রহণ করে এবং তার শারীরিক বিকাশও হয় প্রাকৃতিকভাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুতে পরিণত করে এক সংরক্ষিত আঁধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ডে পরিণত করেছি। এরপর তাতে হাড় স্থাপন করেছি। অতঃপর হাড়কে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে এক নবরূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়! এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১২-১৫)

অন্য আয়াতে মানুষের আহার ও জীবিকা—যার মাধ্যমে মানুষের শরীর বিকশিত হয় সে সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত ধরিত্রী, যাকে আমি সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, যা তারা আহার করে। ’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৩)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘অতঃপর আমি তোমাদের পৃথিবীতে ঠাঁই দিয়েছি এবং তাতে তোমাদের জীবিকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা আদায় করো। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১০)

২. মানসিক গঠন: আল্লাহ মানবজাতিকে যেসব উপাদানের মাধ্যমে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তার অন্যতম হলো তার মানসিক গঠন। মানসিক গঠন দ্বারা উদ্দেশ্য তার বোধ ও বিশ্বাস। মানুষের বোধ ও বিশ্বাস পরিশুদ্ধ করার এবং তা সুদৃঢ়করণে প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এজন্য মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য থাকত তবে তা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যেত। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ২২)

নবুয়ত লাভের আগে নবী ইবরাহিম (আ.)-এর বিশ্বাস পরিশুদ্ধকরণে চন্দ্র-সূর্যের প্রাকৃতিক উদয়-অস্ত ভূমিকা রেখেছিল। তিনি চন্দ্র-সূর্যের নিয়মাবর্তিতা দেখে বুঝতে পারেন তাদের নিয়ন্ত্রক আছে। আল্লাহ বলেন, ‘এভাবে আমি ইবরাহিমকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালনব্যবস্থা দেখাই, যাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। ’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৭৫)

৩. বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ: পরিবেশ ও প্রকৃতি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য পবিত্র কোরআনের অসংখ্য স্থানে মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টি তথা পরিবেশ, প্রকৃতি ও আবহাওয়া নিয়ে ভাবতে বলা হয়েছে, যেন তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটে এবং তারা সত্যের দিশা লাভে সক্ষম হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তারা কী উটের প্রতি লক্ষ্য করে না, তা কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে; আকাশের দিকে লক্ষ্য করে না যে তা কীভাবে উচ্চ করা হয়েছে এবং পাহাড়ের দিকে যে তা কীভাবে স্থাপন করা হয়েছে এবং পৃথিবীর দিকে যে তা কীভাবে সমতল বিছানা হয়েছে। ’ (সুরা গাশিয়া, আয়াত: ১৭-২০)

মানুষের সেবায় নিয়োজিত প্রকৃতি
পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টি ও প্রকৃতি মানুষের কল্যাণে ও সেবায় নিয়োজিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমিনে আছে সেসব। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২)

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ প্রকৃতি ও পরিবেশকে মানুষের জন্য উপকারী ও বন্ধু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সুতরাং মানুষের দায়িত্ব হলো তা সংরক্ষণ করা। পবিত্র কোরআনে সেসব মানুষের নিন্দা করা হয়েছে যারা পৃথিবীর প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। আল্লাহ বলেন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, পার্থিব জীবন সম্পর্কে যার কথাবার্তা তোমাকে চমত্কৃত করে এবং তার অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে। প্রকৃতপক্ষে সে ভীষণ কলহপ্রিয়। যখন সে প্রস্থান করে তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত ও জীবজন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২০৪-২০৫)

আল্লাহ তাআলা মানুষের আবাস এ পৃথিবীকে রক্ষা করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২১
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।