ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসতে দিন

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২১
ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসতে দিন ছবি: সংগৃহীত

অপচয় ও শরিয়তের লঙ্ঘন না করে নিজ নিজ বাড়িঘর, কক্ষ ও অফিস সাজানো শরিয়তের দৃষ্টিতে একটি প্রশংসনীয় কাজ। তবে এ ক্ষেত্রে শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না।

বর্তমানে ঘর, কক্ষ ও অফিস সাজানোর উদ্দেশ্যে শোপিস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে, তা কোনো মন্দ কাজ নয়। তবে এ ক্ষেত্রে একটি প্রবণতা হলো, তাতে মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর ছবি ও প্রতিকৃতির শোপিস ব্যবহার করা হয়, যা একটি শরিয়তবহির্ভূত ও অবৈধ কাজ।

তদ্রূপ বাচ্চাদের খেলনা হিসেবেও অনেকে প্রাণীর প্রতিকৃতি ঘরে রাখে, এর গুনাহের দ্বায়ভার অভিভাবকদের ওপর বর্তাবে।

শরিয়তে নিষিদ্ধ এই কাজগুলো কোনো মুসলিম দেশে বহুল প্রচলন হওয়া বা কোনো বিশেষ গোত্র তাতে লিপ্ত হওয়া তার বৈধতার সনদ দেয় না। কেননা শরিয়তের দলিল হলো কোরআন ও সুন্নাহ, কোনো দেশ ও জাতি নয়।

প্রাণীর ছবিবিশিষ্ট ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না
নবী করিম (সা.)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই ছবিটি দেখলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভেতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে তাঁর চোখে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করছি এবং তাঁর রাসুলের কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ গদি কিসের জন্য? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য খরিদ করে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরো বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮১)

অপর বর্ণনায় রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ঘরে কুকুর থাকে বা প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৪৯)

আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জিবরাঈল (আ.) আমার কাছে এসে বলেন, গত রাতে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি প্রবেশ করিনি। কারণ ঘরের দরজায় ছবি ছিল। ঘরের মধ্যে ছিল ছবিযুক্ত পর্দা এবং ঘরের ভেতরে ছিল কুকুর। সুতরাং আপনি ঘরে ঝুলানো ছবির মাথা কেটে দেওয়ার আদেশ করুন, তাহলে তা গাছের আকৃতিতে পরিণত হবে। আর পর্দাটি কেটে দুটি বালিশের ভেতরের কাপড় বানাতে আদেশ করুন এবং কুকুরটিকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) উপদেশমতো কাজ করলেন। কুকুরটি ছিল হাসান বা হুসাইনের এবং তা তাদের খাটের নিচে শুয়ে ছিল, তিনি সেটাকেও বের করে দেওয়ার আদেশ দেন। ফলে তা বের করে দেওয়া হলো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৫৮)

প্রাণী ছাড়া অন্য জিনিসের প্রতিকৃতি রাখা
সাঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে আববাস (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে ইবনে আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনে আববাস (রা.) তাঁকে বলেন, (এ বিষয়ে) আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আমি যা বলতে শুনেছি, তা-ই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোনো ছবি তৈরি করে আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দেবেন, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে তাতে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। এ কথা শুনে লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পারো, তবে গাছপালা ও যেসব জিনিসে প্রাণ নেই, তা তৈরি করতে পারো। (বুখারি, হাদিস : ২২২৫)

অন্য বর্ণনায় আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নিষিদ্ধ ছবি হলো, প্রাণীর মাথা ও চেহারাবিশিষ্ট ছবি, মাথাবিহীন ছবি নিষিদ্ধ নয়। (শরহু মাআনিল আসার, হাদিস : ৬৯৪৭)
আমরা সবাই ঘর-বাড়ি, দোকান ও অফিস ইত্যাদিতে রহমত বরকত আসার জন্য দোয়া করি এবং অন্য নেককার মুমিনদের দ্বারা দোয়া করিয়ে থাকি, কিন্তু আমরা অনেকে নিজেরাই রহমত ও বরকত আসার পথ বন্ধ করে রেখেছি।

তাই আসুন বাসস্থান ও কর্মস্থল সব জায়গাকেই রহমতের ফেরেশতার জন্য উন্মুক্ত করে দিই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।