ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মাদককারবারির কাছে ওসির ঘুষ দাবি: বাড়ল তদন্তের আরও সময়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
মাদককারবারির কাছে ওসির ঘুষ দাবি: বাড়ল তদন্তের আরও সময়

রাজশাহী: রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমের সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার ঘটনা তদন্তে আরও সময় পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) আগের পাঁচ কার্যদিবস শেষে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি ফের সময় চেয়ে আবেদন করে। এরপর আরও পাঁচ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে দেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি)।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও এই তদন্ত কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম জানান, তারা এখনও তদন্ত শেষ করতে পারেননি। কারণ এ ঘটনায় অনেকেরই সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে। তাই অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তারা আরও পাঁচ কার্যদিবস সময় চেয়েছিলেন এবং সময় পেয়েছেন।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি আরও পাঁচ কার্যদিবসের সময় চেয়েছিল। কারণ অধিকতর তদন্তের জন্য তারা এ ঘটনায় প্রায় ৩৭/৩৮ জনের সাক্ষাৎ নিতে চায়। তাই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আরও পাঁচ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওসি মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন সাহারা খাতুন (২৮) নামের এক নারী। এর সঙ্গে ঘুষ চাওয়ার ছয় মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের সেই কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডও সংযুক্ত করে দেন। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে একই অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওই ওসিকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। যদিও ফাঁস হওয়া অডিওর বক্তব্য ‘এডিটেড’ (সম্পাদনা করা) বলে দাবি করেছেন ওসি মাহবুবুল।

এ ঘটনায় পরদিন রোববার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেন পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল রোববার। তদন্ত কমিটি এরইমধ্যে অভিযোগকারী সাহারা খাতুন, ওসি মাহবুবুল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রুবেলসহ বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ১৯ সেপ্টেম্বর সাহারা খাতুন তদন্ত কমিটিকে পুরো এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড জমা দেন।

ফাঁস হওয়া ছয় মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের অডিওতে ওসি বলেন, ‘এক মন্ত্রী বাদে কারও কথা শুনতে এখানে আসি নাই। ...এই লোকটা রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে সম্মান করি। মন্ত্রী মানেই রাষ্ট্র। আর মন্ত্রী অত্যন্ত ভদ্রলোক মানুষ। আমাকে নিয়ে আসছে সে। আমাকে গাইবান্ধা থেকে নিয়া আসছে। তাহলে আমি যদি খারাপ হই, তাহলে কষ্ট পাবে। ’ এই কথার মধ্যেই চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলতে থাকেন, ‘আপনাকে নিয়া আসছে একেবারে নির্বাচনটা পার করে দেবেন...। ’ জবাবে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘তা তোমাদের রিজিকে আছে কি না, আমি জানি না। এখন এই যে নির্বাচন কমিশনার নাটক শুরু করেছে। ’ ওই অডিওতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বদলি করে দেওয়ারও কথা বলেছেন ওসি।

যদিও ফাঁস হওয়া অডিওর বিষয়ে সম্প্রতি রাজশাহীর এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার অবস্থান পরিষ্কার করেন।  
তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার কোনো নিয়োগেই আমি সুপারিশ করি না। যত দূর মনে পড়ে, তিনি (ওসি) যোগদান করেছেন অনেক দিন আগেই এবং অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতও ছিলেন বলে শুনেছি।

এদিকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগে সাহারা খাতুন দাবি করেছেন, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। সাহারা খাতুনের স্বামীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চারঘাট এলাকায় অনেক মাদককারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। এতে তার স্বামী ও পরিবারের ওপর চারঘাটের মাদককারবারিরা ক্ষিপ্ত হয়। তার স্বামীকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।

আর স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর মাদককারবারিরা তাদের ওপর অত্যাচার চলছে। ১২ সেপ্টেম্বর ওসিকে ফোন দিয়ে সাহারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। এরপর দিন ওসি তাকে থানায় আসতে বলেন। থানায় গেলে ওসি পাশেই থাকা তার কোয়ার্টারে ডেকে নেন। এ সময় সাহারার ছেলেও তার সঙ্গে ছিল। ওসি তার সঙ্গে যেসব কথা বলেন, তা তিনি কৌশলে রেকর্ড করে রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।