ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আমি কখনো আমেরিকা যাইনি, যাবও না: বিদায়ী প্রধান বিচারপতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
আমি কখনো আমেরিকা যাইনি, যাবও না: বিদায়ী প্রধান বিচারপতি

ঢাকা: ‘আমি কখনো আমেরিকা যাইনি, যাবও না’— আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেষ কার্যদিবসে এমন মন্তব্য করেছেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের প্রবেশমুখ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

এ সময় নতুন প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তখন এক সাংবাদিক আমেরিকার ভিসানীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘এটা নিয়ে আমি অত মাথা ঘামাই না। এটা (বাংলাদেশ) স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। তখন যারা ভয় দেখিয়েছে, তারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। আমি এতে বিচলিত নই। ‘

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি কখনো আমেরিকা যাইনি, যাবও না। ’

বিচার বিভাগ নিয়ে প্রধান বচিারপতি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি চেষ্টা করেছি, বিচার বিভাগের চাকাকে গতিশীল করার। তবে আরও বেশি পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি করতে পারলে ভালো হতো। এভাবে সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তির হার চলমান থাকলে ৪/৫ বছরের মধ্যে মামলাজটমুক্ত বিচার বিভাগ পাবে দেশের জনগণ।

তিনি বলেন, মামলাজট নিরসনে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের দিয়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বিচারকদের দিক নির্দেশনা দিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রেখেছেন।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, আমি এক বছর ৮ মাস ২৫ দিন প্রধান বিচারপতির পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময়টাকে আমি সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। কখনো পরিবারের সুখ-শান্তির দিকে তাকাইনি। প্রতিটি মুহূর্ত বিচার বিভাগের উন্নতির জন্য সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জন্য রেকর্ডরুম, হাইকোর্ট মাজার মসজিদের কাজটি সম্পন্ন করে যেতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু এত অল্প সময়ে তো আর সব ইচ্ছা পূরণ হয় না।

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর শেষ কার্যদিবস ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় গত ৩১ আগস্ট এই প্রধান বিচারপতির বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবসের দিনে নিয়ম অনুসারে আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়।

২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শপথবাক্য পাঠ করান।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পড়ালেখা শেষে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর  হাইকোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খুলনা সিটি করপোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির আইন উপদেষ্টা ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল।

২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগে নিয়োগ পান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এছাড়া তিনি ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তার বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৮০ সালের ২৩ এপ্রিল মুন্সেফ হিসেবে বিচার বিভাগের নিয়োগ পান। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হন। ২০০৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং দুই বছর পর স্থায়ী নিয়োগ পান। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তিনি আপিল বিভাগে নিয়োগ পান। ২০২১ সালে ১৫ জুলাই অবসরে যান তিনি। এরপর বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী আইন কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩ 
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।