ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৪
স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড

নরসিংদী: নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী শহীদুল ইসলাম সাগরকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়া হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য মামুন মিয়া নামে আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে হত্যার পর মরদেহ গুম করার অভিযোগে হোটেলের দুই মালিক দেলোয়ার হোসেন, মো. আনোয়ার ও হোটেল ম্যানেজার মো. আমির হোসেনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।  

বৃহস্পতিবার ( ৭ মার্চ) দুপুরে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক শামিমা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নিহত মার্জিয়া আক্তার কান্তার স্বামী কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গণি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলার সাগর, তার ফুফাতো ভাই একই জেলার রতনপুর গ্রামের মামুন মিয়া, কুয়াকাটা জেলার ছোবাহানের ছেলে হোটেল আল মদিনার মালিক দেলোয়ার হোসেন (৪৪) তার ভাই মো. আনোয়ার হোসেন (৩৭) ও আল মদিনা হোটেলের ম্যানেজার পটুয়াখালীর মেহেরপুর গ্রামের মো. আমির হোসেন। এদের মধ্যে শহিদুল ও মামুন পলাতক রয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বীর বাঘবের গ্রামের সোহরাব হোসেন রতনের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার কান্তার সাথে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গণি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলার সাগরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিল নিহতের স্বামী। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে এক বছর পর নিহত কান্তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এক মাস পর নিহতের স্বামী সাগর কান্তার বাড়িতে আসে এবং তাকে ভারত বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে কুয়াকাটা জেলার আল মদিনা হোটেলে উঠে। সেখানে সাগরের ফুফাতো ভাই মামুনকে সাথে নিয়ে কান্তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হোটেলে হত্যা করে। হত্যার পর মরদেহ পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে বক্স খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়। পরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে রুমের খাটের নিচে নারীর মরদেহ দেখতে পায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে হোটেল আল মদিনার মালিক দুই সহদোর দেলোয়ার, আনোয়ার হোসেন ও হোটেল ম্যানেজার আমিরসহ তিনজন নিহতের মরদেহ বস্তাবন্দি করে কুয়াকাটা সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

দীর্ঘদিনেও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে নিহতের বাবা সোহরাব মিয়া কুড়িগ্রাম মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যায়। সেখানে মেয়ের খোঁজ জানতে চাইলে তারা জানায় তার মেয়ে কান্তা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। একপর্যায়ে কান্তার বাবাকে নানা ধরনের ভয় দেখায় মেয়ের স্বামী সাগর। এতে তার সন্দেহ বাড়ে। পরে তিনি মেয়ের স্বামী শ্বশুর,শাশুড়িসহ ৫ জনকে আসামি করে নরসিংদী আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য করার জন্য বেলাবো থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। পরে পুলিশ নিহত কান্তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক শামিমা পারভীন স্বামীকে আমৃতু কারাদণ্ড তার ফুফাতো ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অন্যদিকে হত্যার পর হোটেল থেকে মরদেহ গুম করার অভিযোগে হোটেল মালিক ও ম্যানেজারকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

নিহতের বাবা মামলার বাদী সোহরাব হোসেন রতন বলেন, রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করতে পারছি না। সরকারের কাছে তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। কারণ সে যেভাবে আমার মেয়েকে মিথ্যে বলে বাড়ি থেকে নিয়ে হত্যা করেছে, তা আমি কোনোভাবে মানতে পারছি না।

এদিকে আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট অলিউল্লাহ বলেন, মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা এবং ক্লু লেইস মামলা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে মামলাটির রহস্য বের করে এনেছেন। কারণ মেয়ের বাড়ি নরসিংদী, শ্বশুরবাড়ি কুড়িগ্রাম। মেয়েটিকে খুন করার জন্য প্রথমে শরীয়তপুর পরে পটুয়াখালী নিয়ে যাওয়া হয়। সবশেষ কুয়াকাটা নিয়ে মেয়েটিকে হত্যা করে মরদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় স্বামী। আবার হোটেল মালিক মেয়ের মরদেহটিকে গুম করার জন্য সাগরে ভাসিয়ে দেয়। অনেকগুলো ক্রিমিনাল অফেন্স জড়িত। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদলতের বিচারক একটি দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছে। এতে আমার খুশি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।