ঢাকা: বিচারক হিসেবে দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় প্রদানসহ জাল রায় তৈরির অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (৩০ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
এর আগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক খালেক মিয়া। সেই আবেদনের শুনানির জন্য আজ সকালে তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
এদিন প্রথমে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক দিদার ও মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তবে আসামিপক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে বিচারক তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
গত ২৭ আগস্ট রাতে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, বিচারপতি খায়রুল সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রভাবিত হয়ে অবসর পরবর্তী ভালো পদায়নের লোভে দুর্নীতিমূলকভাবে শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য ২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত আদেশটি পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করেন। সেই মামলার শুনানি করে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। রিট আবেদনকারী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন আপিল বিভাগ। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক।
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু ওই বছর সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সময় ‘জালিয়াতি’ করা হয়।
এর আগে গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলার ওইদিন রাতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় তাকে ভার্চু্যয়ালি গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
কেআই/এসআইএস